লাইলি বেগম (৪৫)। কুড়িগ্রামের রাজারহাট সদর ইউনিয়নের কোনস্তার পাড় গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী। পারিবারিকভাবে দেশীয় জাতের ছাগল (ব্লাক বেঙ্গল) পালন করে বছরে তার আয় লাখ টাকা।

২০-২৫ বছর আগের কথা। সে সময় নিজের থাকার মতো ঘর ও জায়গা জমি ছিল না লাইলির স্বামী খলিলুরের। অন্যের রাইস মিলে দিনমজুরির কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। ওই সময় জমানো কিছু টাকা দিয়ে লাইলি বেগম দেশীয় জাতের একটি ছাগল কিনে শুরু করেন লালন-পালন। কিছু দিন পর দুটি বাচ্চা দেয় ছাগলটি। বাচ্চা দুটো বড় করে একটি বিক্রি করে আরও দুটি ছাগল কেনেন লাইলি। আস্তে আস্তে বাড়িতে গড়ে তোলেন পারিবারিক খামার।

ধীরে ধীরে সংসারের অভাব ঘোচাতে থাকে। এখন তার পারিবারিক খামারে ছোট-বড় মিলে ২৪টি ছাগল রয়েছে। ছাগলগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। তবে বর্ষা মৌসুম হওয়ায় ছাগলের পেছনে তার প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে মাঠে খাওয়ানোর ফলে তেমন কোনো খরচ হয় না। ছাগল বিক্রির টাকা জমিয়ে ১৮ শতক জমি কিনেছেন। তৈরি করছেন দুই রুম বিশিষ্ট পাকা বাড়ি। পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচও বহন করেছেন তিনি। 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় ছাগল-ভেড়া রয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২৪ হাজার। তবে চরাঞ্চলে খামারের সংখ্যা কম। তবে পারিবারিক ছাগলের অনেক খামার রয়েছে। 


লাইলি বেগম বলেন, আমি প্রথমে দুটি ছাগল কিনছি। ওই ছাগল দিয়ে অনেক ছাগল করেছি। পরে সেই ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে ১৫ শতক জমি কিনছি। বাড়ি করছি পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাইছি। ছাগল পালনে আমি মোটামুটি সফল হইছি। সরকার যদি আমাকে সহায়তা করত তাহলে আমি আরও বড় পরিসরে ছাগলের খামার করতাম।

প্রতিবেশী আলতাফ হোসেন বলেন, লাইলি সম্পর্কে আমার চাচি হয়। ছাগল পালন করে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। আগে তাদের থাকার মতো ঘর ছিল না। এখন ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে জায়গা কিনে বাড়ি করেছে। ভালোই চলছে তাদের। তবে সরকারিভাবে যদি লাইলিকে সহযোগিতা করা হতো তাহলে তারা আরও বড় পরিসরে খামারটি করতে পারত।

লাইলি বেগমের স্বামী খলিলুর রহমান জানান, আমার স্ত্রীর কারণে আমার সংসারে অভাব দূর হয়েছে। সে খেয়ে না খেয়ে ছাগলগুলোকে নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকে। প্রতি বছর ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার ছাগল বিক্রি করি। আমি বাড়ি থেকে সকালে কাজে চলে যাই। তারপর সারাদিন সে সংসারের কাজ সামলে ছাগলগুরৈাকে লালন-পালন করে।

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার জানান, আমাদের অফিস থেকে লাইলি বেগমের ছাগলের জন্য ভ্যাকসিন ও কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া হয়। তার খামারের ছাগলগুলোর কোনো সমস্যা হলে তারা অফিসে যোগাযোগ করেন। আমরা লোক পাঠিয়ে ছাগলের চিকিৎসা করে থাকি।

জুয়েল রানা/এসপি