নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপসহ উপজেলা হাতিয়াকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মালামাল আসতে শুরু করায় জনগণের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপ। এর মধ্যে সরকার দেবে ৩৭০ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ৫০ বছর পর ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের আদলে ৩০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ-সেবায় যুক্ত হচ্ছেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হবে ১ হাজার ১০০টি ট্রাক। এর মধ্যে ২০ টন ওজনের বড় লরিও ব্যবহৃত হবে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ হওয়ায় একটি ভাসমান ফেরি আনা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে ট্রাকবোঝাই মালামাল আসা শুরু হয়েছে। এর আগে বুধবার (১৮ আগস্ট) থেকে প্রকল্পটির জন্য আওতায় বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থা উন্নয়নে হাতিয়ায় তিনটি নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মালামাল আসে। নদী পাড়ি দিয়ে আনা এসব মাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপজেলা সদরের দক্ষিণে হরেন্দ্র মার্কেটের পাশের বালুর মাঠে। এখানেই হেভি ফুয়েল ওয়েল (এইচএফও) ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে। এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগ এই স্থানে ১৬ একর অধিগ্রহণ করে বালু ভরাট করে রেখেছে।

মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নদী পথ হওয়ায় একটি ভাসমান ফেরি আনা হয়েছে। একবার একটি ফেরিতে ১০টির মতো ট্রাক পারাপার করা যাবে। এই ফেরিতে ট্রাকগুলো হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নলচিরা ঘাটে পৌঁছানো হবে। এ ছাড়া হাতিয়ার সড়কগুলো এসব ট্রাক চলাচলের জন্য অনুপযোগী। তাই বিশেষ করে ঘাট এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

ফেরি থেকে ট্রাক নামানোর জন্য ঘাটে বিশাল মাঠ তৈরি করা হয়েছে। ঘাট থেকে প্রকল্প এলাকার দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সড়কের অনেক স্থানে গাছ কেটে বাড়ানো হয়েছে প্রশস্ততা। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। কিন্তু গত বুধবার বিদ্যুতের মালবাহী ট্রাকগুলো আসতে দেখে সাধারণ মানুষকে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেছেন।

হাতিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এতে শুধু পৌর এলাকার কিছুসংখ্যক মানুষ বিদ্যুৎ-সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে নিঝুম দ্বীপসহ হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়নের মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের অনুমোদন দেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু বিতরণ বিভাগের উন্নয়ন করা হবে। উৎপাদনের জন্য চুক্তি করা হয় দেশ এনার্জি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে। তারা প্রাথমিকভাবে ১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্ট তৈরি করবে হাতিয়ায়।

এ বিষয়ে দেশ এনার্জি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতিয়ায় ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ হাতিয়ার হরেন্দ্র মার্কেট এলাকায় পাঁচ একর জমি দিয়েছে কোম্পানিকে। সেখানে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখানে ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হেভি ফুয়েল ওয়েল (এইচএফও) ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাতিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আনা মালামাল চট্টগ্রামের বন্দরে চলে এসেছে।

হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দ্বীপবন্ধু মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুজিববর্ষে হাতিয়াবাসীর স্বপ্ন বাস্তবয়ান হবে। এর মাধ্যমে হাতিয়ায় শতভাগ বিদ্যুৎ উন্নয়ন হবে। এটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে হাতিয়াবাসীর জীবনযাত্রায়।

নোয়াখালী-৬ আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে শতবাগ বিদ্যুতায়নের জন্য বারবার জাতীয় সংসদে দাবি উত্থাপন করেছি। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

হাসিব আল আমিন/এনএ