ফরিদপুরে পদ্মাপারে বন্যার পানিবৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গোয়ালন্দ পয়েন্টে রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীর পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ফরিদপুরে এখন পর্যন্ত ১১টি ইউনিয়নের ২৪১টি গ্রামের ২০ হাজার ১০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে অন্তত ২ হাজার ২০০ পরিবারের বাড়িঘর। ফলে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক পারিবার বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দূরে স্বজনদের বাড়িতে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পূর্ব রামকান্তপুর ও মোস্তফা ডাঙ্গী এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে অন্তত ১১টি পরিবার। একই ইউনিয়নের পূর্ব রামকান্তপুর থেকে চাটামবাজার গামী আমাজদ শেখের বাড়ির সামনের পাকা সড়কের ২৫ ফুট অংশ পানি তোড়ে ভেসে গেছে।

চর পূর্বডাঙ্গী গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়া বেগম (২৬) বলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নাই। চারদিক শুধু পানি আর পানি। এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যেতে হলে পানিতে অর্ধেক নামতে হয়। বড় দুর্ভোগের মধ্যে আছি। দেখার কেউ নাই।

মোস্তফা ডাঙ্গী গ্রামের অনেকেই পানিতে ডুবন্ত। ঘরে তালা ঝুলিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ওই গ্রামের মকু সর্দার (৫৬) বলেন, বাড়িঘর পুরা তলাইয়া গেছে। ভেতরের চৌকি উঁচু থাকাও সম্ভব না। তাই ঘরে তালা দিয়া চলে যাচ্ছি অন্য জায়গায়। পানি কমলে বাড়িতে আসব।

এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে।

নারকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বলেন, তার ইউনিয়নের নন্দলালপুর মৌজার হামিরডাঙ্গী, কান্দী, নূরুদ্দিন সরকারের কান্দী ও লাল মিয়া সরকারের কান্দি এলাকায় ১৭টি বসতভিটা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, তার ইউনিয়নে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ৭০০ পরিবার, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, ৭/৮টি মসজিদ ও একটি বাজার। এরপরও ভাঙন রোধে তার এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেখানে এ পর্যন্ত ১৫০ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, পানিবৃদ্ধির এ প্রবণতা কমতে থাকলেও আরও তিন-চার দিন পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা আরও বলেন, দিয়ারা নারকেলবাড়িয়ায় ভাঙনকবলিত এলাকায় সরেজমিনে পাউবোর প্রতিনিধি পাঠানো হবে। ওই প্রতিনিধি দলের সুপারিশের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এনএ