পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় কালিগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে চলে গেছে মধুরাবাদ থেকে শ্রীরামকাঠী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক। যা দিয়ে প্রতিদিন মধুরাবাদ, ভুবনখালী, পূর্ব কালিকাঠী, ডুমুরিয়া, কাইলানীসহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ পথচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াত। কিন্তু নদীভাঙনে সড়কটি ক্ষেতের আলে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর।

চার-পাঁচ বছর আগে একবার সড়কটি সংস্কার করার পর মাঝে দুই বছর এ পথে মানুষ চলাচল করেছে। কিন্তু তিন বছর ধরে রাস্তাটি ভাঙতে ভাঙতে সরু হয়ে চলাচলের একেবারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

এদিকে পথের সেতুটিও নদীতে যাওয়ার উপক্রম। তাই মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তার ওপরেই কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে সেতু। ৮ নং শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের এই রাস্তাটি সংস্কার ও রক্ষা না করা হলে শিগগিরই নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নে কালিগঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটির বেহাল দশা। স্থানীয় মানুষ বহুদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। কয়েক দিন আগে হাজার হাজার পথচারীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে শ্রীরামকাঠী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান মিঠু স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিজ উদ্যোগে কাঠের সেতুটি নির্মাণ করেন। এতে কিছুটা হলেও দুর্ভোগ কমেছে। তবে পানি বাড়লেই এটিও নিমজ্জিত হয়।

মিজানুর রহমান মিঠু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নিজেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চলাচলের জন্য ২০০ ফুটের কাঠের সেতুটি নির্মাণ করি। এতে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। আরও ২০০ ফুটের কাজ বাকি আছে। তাতেও লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। রাস্তাটি সরিয়ে অন্যত্র দিয়ে দ্রুত সংস্কার না করা হলে দ্রুত নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে অঞ্চলটি।

স্থানীয় বাসিন্দা অঞ্জলি রানী বলেন, এভাবে সব ভেঙে যাচ্ছে। আমরা দিন আনি দিন খাই। কোমরসমান পানি ভেঙে বাজার ও চাল নিয়ে পার হই। বয়স হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়ে নাই। কীভাবে বাঁচব এমন হলে?

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন, মধুরাবাদ থেকে শ্রীরামকাঠী পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার জায়গা। আগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছিল, সেটা সম্পূর্ণ নদীতে ভেঙে গেছে। এখান দিয়ে হাঁটাচলা করা মারাত্মক সমস্যা। রাস্তা না থাকায় জমির ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ঝন্টু ব্যাপারী জানান, রাস্তা যা একটু করা হয়েছে, তা ভেঙে নিচে নেমে গেছে। কিছুদিন আগে তো চলতেই পারতাম না। এখন কাঠের সেতুটা করে দেওয়ায় একটু চলাফেরা করা যায়। তবে সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দেয়। তাহলে আমরা সহজে হাটবাজারে আসা-যাওয়া করতে পারব।

স্থানীয় মো. মনির শেখ জানান, শুধু রাস্তা নয়, ধানের জমিও ক্ষতিগ্রস্ত। চার-পাঁচ বছর আগে এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। যা কোনো কাজেই আসে নাই। কালিগঙ্গা নদীর ভাঙনে এই অঞ্চলের মানুষগুলো খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শ্রীরামকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. সেলিম শেখ জানান, মধুরাবাদ থেকে শ্রীরামকাঠী রাস্তাটি যতবারই মেরামত করা হয়েছে, ততবারই ভেঙে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, অনেকের ফসলি জমি ও বাড়িঘর কালিগঙ্গা নদীতে হারিয়ে গেছে। তাদের জন্য হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি সিমেন্টের ব্লক বা বালুর বস্তা দিয়ে এই ভাঙন রোধ না করে, তাহলে অচিরেই রাস্তাসহ বাড়িঘর নদীতে হারিয়ে যাবে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন মিয়া ঢাকা পোস্টকে জানান, আড়াই কিলোমিটার রাস্তার এক কিলোমিটার যেখানে নদীভাঙন হয় না, সেটি কার্পেটিং করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। যে রাস্তাটুকু নদীভাঙনকবলিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত, সেটুকু নাজিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী সময়ে নদীভাঙন রোধ করে রাস্তা সরিয়ে নিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, কালিগঙ্গা নদীর ভাঙনে রাস্তার অনেকটাই ভেঙে গেছে। আমরা জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। এই রাস্তা দিয়ে তিন-চারটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি নদীভাঙন রোধে প্রতিরক্ষাবিষয়ক কিছু নির্মাণ করে, তাহলেই রাস্তাটি রক্ষা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, টিআর-কাবিখার প্রকল্পের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে মাটি ভরাট করে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া যাবে। তবে তার আগে নদীভাঙন রোধে কিছু করা দরকার, যেটা পানি উন্নয়ন বোর্ড করতে পারে।

মো. আবীর হাসান/এনএ