কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভাতার খোঁজে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ৩৫ জন সুবিধাভোগী। মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে তারা অনশন শুরু করেন। তাদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বাসহ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তবে সুবিধাভোগীরা জানেন না তাদের টাকা কোন নম্বরে যাচ্ছে। এসব টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাদের বিপরীতে যে নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেখানে কারও নম্বর ভুল, কারও নম্বর থাকলেও ওই নম্বর কার তা জানেন না ভাতাভোগীরা। 

এ কারণে সঠিকভাবে ভাতাভোগীরা তাদের প্রাপ্য পাচ্ছেন না। অনেক নম্বর বন্ধ থাকায় টাকা কে নিয়েছেন তাও জানা যাচ্ছে না। এমন অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন উপজেলা সমাজসেবা অফিস কার্যালয়ে ভাতাভোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন। অফিসের কর্মকর্তারাও ফোন নম্বর সংশোধন করতে ব্যস্ত। তবে যেসব টাকা ভুল নম্বরে চলে গেছে বা আত্মসাৎ করেছেন সেসব টাকা কিভাবে ফেরত আনা যাবে তা জানে না উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তারা। তবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। 

পিয়ারপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আমদহ এলাকার বয়স্ক ভাতা গ্রহীতা আব্দুস সাত্তার জানান, মোবাইলে ভাতার টাকা আসবে বলে আমরা কাগজপত্র জমা দিয়েছি। পরে অনেকের টাকা এলেও আমরা নামের টাকা এক বছর ধরে পাইনি। সমস্যা সমাধানের জন্য সকাল ৯টা থেকে রাত পর্যন্ত না খেয়ে অনশন করছি। কোনো সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত বাড়ি যাব না।

সকাল থেকে বসে থাকা আল্লাহর দর্গা এলাকার অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী মিতু আক্তার বলেন, এক বছর ধরে ভাতার টাকা পাচ্ছি না। এ কারণে আজ সমাজসেবা অফিসে এসেছি। এখন কোনো সমাধান পেলাম না। আমার টাকা নাকি অন্য কারও নম্বরে চলে গেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক বছর আগে নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এজেন্টদের উদাসীনতায় নম্বর ভুল এন্ট্রির কারণে প্রায় ৩৫ জনের টাকা চলে গেছে অন্যের নম্বরে। এ নিয়ে ছয় মাস ধরে প্রতিদিন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ভিড় করছেন ভুক্তভোগী ও তার স্বজনরা।

দূরদূরান্ত থেকে ভাতাভোগীরা সমাজসেবা অফিসে এলেও টাকা ফেরত পাবেন কি না এর কোনো সমাধান করতে পারছেন না অফিস কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিস বলছে, সুবিধাভোগীদের নগদ অ্যাকাউন্ট নগদ এজেন্টের লোকজন করেছেন। এমনকি নিজের নম্বরটি ভুল করে দেওয়ার কারণেই হয়তো এমন হয়েছে।

পিয়ারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ লালু জানান, নগদের নম্বর ভুলের কারণে অনেক ভাতাভোগী এক বছর ধরে ভাতা পাচ্ছেন না। এ কাজটি করেছে মূলত একটি চক্র। অনেকের টাকা অন্যের মোবাইলে চলে গেছে। বিষয়টি সমাধান করার জন্য সমাজসেবা অফিসকে জানানো হয়েছে। তবে যারা নগদ অ্যাকাউন্ট খুলেছিল তারা এবং উপজেলা সমাজসেবা অফিসাররা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। 

ভাতা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। আমি দৌলতপুরের বাইরে আছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা না পাওয়া সুবিধাভোগীরা সমাজসেবা কার্যালয়ে সকাল থেকে অনশন করছেন। আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তাদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। 

রাজু আহমেদ/এসপি