শীতল পাটি তৈরিতে ব্যস্ত নারী শ্রমিক

গ্রামীণ শিল্প ও ঐতিহ্যের এক নাম শীতল পাটি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শীতল পাটি আজ বিলুপ্তির পথে। একটা সময় শাহরাস্তির শীতল পাটি চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হতো। কিন্তু কালের আবর্তে এখন আর গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য শীতল পাটি কোথাও বিক্রি হয় না। আর্থিক সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, উপকরণের দুষ্প্রাপ্য এবং ক্রেতা স্বল্পতার কারণে এই শিল্পের কারিগরেরা চরম দুর্দিনে।

তেমননি একজন শাহরাস্তির কালিয়াপাড়া এলাকার কৃষ্ণা রানি। তিনি বলেন, এক সময় শীতল পাটি বানিয়ে বেশ টাকা-পয়সা আয় হতো। আর এখন কেউ বানাতেও আসে না। মার্কেটে এখন বাহারী রকমের প্লাস্টিকের পাটি (শীতল পাটি) পাওয়া যায়। এ কারণে সবাই মার্কেট থেকেই কিনে নেয়। এখন শুধু নিজেদের জন্য শীতল পাটি বানাই।

এদিকে, উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কয়েকটি বাড়ি এখনও শীতল পাটির শিল্প ধরে রেখেছে। সেখানে গেলে দেখা মিলে হাতেবোনা শীতল পাটির কাজ। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীতল পাটির পরিবর্তে দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন আসবাবপত্র।

শাহরাস্তির নিজমেহার গ্রামের বিলকিস বেগম বলেন, আগে গ্রামের মেয়েরা সেলাই, শীতল পাটি বুনন, হাতের কারুকাজসহ বিভিন্ন কাজ শিখত। কিন্তু বর্তমান সময়ে মেয়েরা কম্পিউটার আর মোবাইল ফোনের পেছনে ছুটছে। যার কারণে নতুন করে কেউ কাজ শিখছে না। এছাড়া গ্রামে আগে প্রচুর পাটি বেত পাওয়া যেত কিন্তু এখন আর পাওয়া যায় না। তাই শীতল পাটিও তৈরি হচ্ছে না।

নকশি কাঁথার মতো শীতল পাটির সঙ্গেও জড়িয়ে থাকে নারীর সুখ-দুঃখ, হাসি কান্না

উপজেলার ফটিকখিরা এস এ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্য লালন করে হাতের তৈরি শীতল পাটি। এখনও চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে বাজার ধরিয়ে দিতে পারছি না তাদের। এজন্য সরকারিভাবে এগিয়ে আসা দরকার।

শাহরাস্তি ঠাকুর বাজারের কুটির শিল্প ব্যবসায়ী আমীর হোসেন বলেন, আগের দিন এখন আর নেই। আগে এক দেড় দুইশ টাকা দিয়ে পাটি পাওয়া যেত। আর এখন ৫শ টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না। বাজারে এখন দেড়শ টাকা দিয়ে প্লাস্টিকের পাটি কেনা যায়। সরকারের উচিত শীতল পাটি শিল্পকে টিকিয়ে রাখা। এজন্য কারিগরদের যথাযথ মূল্যায়ন এবং আরও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, বেশ কয়েকমাস আগেও জাইকার অর্থায়নে উপজেলা প্রশাসন থেকে শীতল পাটি বুনন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা শীতল পাটিসহ কুটির শিল্প নিয়ে আবারও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। গ্রামীণ শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ধরে রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব্। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এসপি