পাটের আঁশ তুলে নেওয়ার পর সেই কাঠি বিক্রির বাজার তৈরি করেছেন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ২ নং ইলুহার ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাহাদাৎ-শিরিন দম্পতি। তবে তাদের বাজারে ভিড় না থাকলেও অর্ডার থাকে প্রতিদিনই। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে তাদের অবসর মেলা ভার।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটকাঠি প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। ছোট-বড় এবং ভালো-খারাপ দুই ধরনের কাঠি আলাদা করতে হয়। সেগুলো গুনে গুনে বেঁধে রাস্তার দুই ধারে সাজিয়ে রাখতে হয়। ক্রেতা এসে দেখে কিনে নিয়ে যান। 

মজার বিষয় হলো- ওই অঞ্চলের পাটকাঠির বাজার তৈরি করেছেন শাহাদাৎ মেনন ও তার স্ত্রী শিরিন বেগম। শাহাদাৎ-শিরিনের পাটকাঠির বাজারে আর কোনো বিক্রেতা নেই তারা ছাড়া। প্রথমাবস্থায় ক্রেতার সংকট থাকলেও দিনে দিনে তা ঘুঁচে গেছে। তাদের পাটকাঠির বাজারের নাম ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়। পাটকাঠির দরকার হলেই কল আসে শাহাদাতের ফোনে।

কথা হয় শাহাদাৎ মেননের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসার শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। পারিবারিক অনটনের জন্য কাজের সন্ধান করতে থাকেন। অন্যের সঙ্গে ব্যবসা করেও সুবিধা করতে পারছিলেন না।

তিনি বলেন, বানারীপাড়া উপজেলায় অনেকগুলো পানের বরজ রয়েছে। এই বরজে পাটকাঠি ব্যবহার করা হয়। কুঁড়ি বছর আগে এভাবে পাটকাঠি পাওয়া যেত না। পানের বরজ করতে হলে বরজ মালিককে নিজের জমিতে পাট বা ধইঞ্চা রোপণ করে কাঠি সংগ্রহ করতে হতো। অনেক বরজ মালিক পাটকাঠির ব্যবস্থা করতে পারতেন না। তখনই পাটকাঠি বিক্রির কথা চিন্তা করি। 

সেই চিন্তা থেকে অল্প অল্প কাঠি কেনা শুরু করি। এরপর সেগুলো শুকিয়ে বানারীপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় পানবরজের মালিকের কাছে যেতাম। দিনে দিনে পরিচিতি পাওয়ায় এখন আর যেতে হয় না।

তিনি জানান, নড়াইল, কাশিয়ানী, মোকসেদপুর, গোপালগঞ্জ, বড়দিয়া ও এর আশপাশের এলাকা থেকে কাঁচা কাঠি সংগ্রহ করি। তারপর সেগুলো বানারীপাড়ায় নিজের বাজারে বিক্রি করি। মূলত গুঠিয়া, নারায়ণপুর, স্বরূপকাঠি, নলছিটি, ঝালকাঠি এলাকার পান বরজ মালিকরা এসে কাঠি কিনে নিয়ে যান।

শাহাদাৎ মেনন বলেন, ৩০০-৯০০ টাকার মধ্যে এক কাহন (১২৮০ পিস) পাটকাঠি বিক্রি করি। এখানে দুই দুই ধরনের ক্রেতা রয়েছে। ভালো মানের কাঠি পানের বরজের জন্য আর একটু নিচু মানের কাঠি ফুলের ঝাড়ু তৈরি করার জন্য কেনেন তারা।

শাহাদাৎ মেননের স্ত্রী শিরিন বেগম বলেন, আমাদের সংসারের মূল আয়ের উৎস পাটকাঠি ব্যবসা। এই আয় দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করি। পাটকাঠির চালান নিয়ে আসার পর প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি উপযোগী করতে ৮-১০ দিন সময় লাগে।

ওই হাট থেকে পাটকাঠি কিনেছেন নলছিটির শুভংকর সাওজাল। তিনি বলেন, শাহাদাতের পাটকাঠির মান ভালো। বিভিন্ন উপজেলায় আরও কয়েকজন পাটকাঠি বিক্রি করেন। কিন্তু তারা লম্বা আর খাটো পাটখড়ি মিলিয়ে বিক্রি করেন। এগুলো পানের বরজে ব্যবহার করা যায় না। আমি সাত বছর ধরে তার কাছ থেকে পাটখড়ি কিনছি। ভালো পাটখড়ি দেয় বলেই এত বছর তার সঙ্গে লেনদেন করতে পারছি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি