হাস্যোজ্জ্বল ছেলেটির নাম সিয়াম হোসেন (৮)। যখন তার বয়স চার বছর তখন ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। দারিদ্র্যের কারণে ছেলেটির তেমন চিকিৎসা করাতে পারেননি বাবা-মা। তবে তারা ছেলেকে সুস্থ করার জন্য সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন। চার বছর ধরে ছেলেটির চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে পরিবার যখন দিশেহারা ঠিক তখন তার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ। 

সিয়ামের বাবা গোলাপ হোসেন। মা রানী বেগম। নাটোর সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীয়া উত্তর চৌকিরপাড় এলাকার বাসিন্দা তারা। 

গোপাল হোসেন একজন কৃষক। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। জমিতে যেটুকু ফসল হয়, তা দিয়ে কোনো মতো দিন পার করেন তিনি। সিয়ামসহ এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান তাদের। এ অবস্থায় সিয়ামের বাবা ও মা তাদের ছেলেকে সুস্থ করতে চিকিৎসক ও বিত্তবানদের সাহায্য চেয়েছেন।

সিয়ামের বাবা ঢাকা পোস্টকে বলেন, জন্মের সময় সিয়ামের কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। তবে ৪ বছর বয়সে তার চলাচল দেখে বুঝতে পারি সে স্বাভাবিক নয়। পরে তাকে একাধিক চিকিৎসক দেখাই। চিকিৎসক এটিকে ব্রেইন টিউমার বলে চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেন। ইতোমধ্যে চিকিৎসা করে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এতে কোনো উন্নতি না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের কাছে হাজির হয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, নিজস্ব জমিজমা-বাড়ি বলতে কিছুই নেই। অন্যের দেওয়া বাড়িতে পুকুরের পাহারাদার হিসেবে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে। দুই মেয়ে, ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে আমার পরিবার।  ছেলেটির চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুই হয়নি। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

শিশুটির মা রানী বেগম বলেন, সিয়াম হওয়ার আগ মুহূর্তে জানতে পেরেছিলাম স্বাভাবিক হবে না। তবুও জন্মের পর বেশ ভালোই ছিল। যখন তার বয়স চার বছর তখন থেকেই রোগের দেখা। সে চোখে ঝাপসা দেখতো। অনেক কষ্টে অপারেশন করার পর চোখ দুটো ফিরে পেয়েছে। কিন্তু ধরা পড়েছে ব্রেইন টিউমার। চার বছর হলো ছেলেটির চিকিৎসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সুস্থ হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, মাঝে মধ্যে যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ছেলেটি দুই হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে। ছেলেটি অসংলগ্ন আচরণ করে। তার দুঃসহ যন্ত্রণার এ দৃশ্য দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। কিন্তু কী করব। অপারেশনের জন্য যে টাকা দরকার তা যোগাড় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। 

রানী বেগম চিকিৎসক ও বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, সবাই মিলে আমার ছেলেটাকে ভালো করে দিন।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিজে থেকেই উদ্যোগ নিয়েছি। এর আগেও ওরা আমার কাছে তিনবার এসেছিল। সকলের সহযোগিতায় এই কাজটি করতে চাই। আমি ডাক্তারদের সঙ্গে কথাও বলেছি। দেশে চিসিৎসা করা সম্ভব না হলে প্রয়োজনের দেশের বাহিরে পাঠাবো। সবার সহযোগিতায় কামনা করি। যদি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকাও লাগে আশা করি সেটা ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। আমি চাই শিশুটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। 

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারকে আপাতত ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় শিশুটির চিকিৎসা হবে।  

উল্লেখ, বুধবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ‘ডিসি নাটোর’ নামের ফেসবুক থেকে  ‘আমার পাশের হাস্যোজ্জ্বল, স্মার্ট ছেলেটি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। তার বাবা মা অতি দরিদ্র হওয়ায় প্রত্যাশিত চিকিৎসা হয়নি। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নাটোরের এই নিষ্পাপ শিশুর জন্য আমরা সবাই মিলে কিছু করতে চাই।’ লিখে একটি পোস্ট করা হয়। এরপর ফেসবুকে পোস্টটি ভাইরাল হলে জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান সবাই। 

তাপস কুমার/আরএআর