দীর্ঘ ১৮ মাস পর আগামী রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) খুলবে স্কুল। অথচ শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) স্কুল মাঠে পানি থই থই করছে। সেখানে জাল ফেলে মাছ ধরা হচ্ছে। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের বেজড়া-নারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই দৃশ্য দেখে হতাশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মূলত মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানি সরানোর ব্যবস্থা না থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে বিদ্যালয়টির পূর্ব ও দক্ষিণে অপরিকল্পিতভাবে বসতঘর ও পশ্চিমে পাকা সড়ক নির্মাণ করায় মাঠটি নিচু হয়ে গেছে। এ কারণে বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে যায়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস মাঠটি তিন ফুট পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ফলে এই সময় এখানে খেলাধুলাসহ সব ধরনের কার্যক্রমও বন্ধ থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্কুল মাঠে পানি থই থই করছে। স্থানীয় দুই ব্যক্তি স্কুলমাঠের পানিতে জাল ফেলে মাছ ধরছেন। তাদের একজন হারুন শিকদার বলেন, প্রতি বর্ষায় আমরা স্কুল মাঠে মাছ ধরি। আশপাশের পুকুর ও খাল থেকে এখানে মাছ আসে।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিদ্যালয়টির প্রাক্তন ছাত্র সুমন শিকদার বলেন, এই মাঠে টিফিন বিরতির সময় এবং বিকেলে খেলাধুলা করেছি। এ ছাড়া এলাকার কিশোর ও তরুণরা এখানে নিয়মিত ফুটবলসহ নানা ধরনের খেলাধুলা করত। মাঠে পানি জমে থাকায় এখন এসব বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, দুদিন পরেই স্কুল খুলবে। সবাই চিন্তিত। শিশুরা কীভাবে স্কুলে আসবে। 

বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষক নাহিদ পারভীন পলি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাঠটির অবস্থান থেকে আশপাশের স্থান উঁচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি বের করার ব্যবস্থা নেই। ১৮ মাস পর স্কুল খুলবে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চিন্তায় আছি- কীভাবে স্কুলে যাব। বছরের ছয় মাসই এটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। মাঠটি উঁচু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। 

তিনি জানান, ১৯৪০ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। এই প্রতিষ্ঠানের সীমানার মধ্যে ৫০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি মাঠও আছে। মাঠটিতে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও শারীরিক কসরত করে। বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। 

এ বিষয়ে নহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মিয়া জানান, এর আগে ওই মাঠ থেকে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে কয়েকবার পানি বের করে দেওয়া হয়েছে। ওই স্থানে নালা রয়েছে। কিন্তু এটি মাঠের চেয়েও উঁচুতে থাকার কারণে ওই নালা দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। মাঠটি মাটি দিয়ে ভরাট না করা পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুবিয়া পারভীন জানান, মাঠটি ওই এলাকার রাস্তা থেকে চার ফুট নিচু। তাই মাটি দিয়ে ভরাট করা ছাড়া মাঠের জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। সব স্থান মাটি দিয়ে ভরাট করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এত টাকা একবারে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তবে এটি পর্যায়ক্রমে ভরাট করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মহম্মদ বলেন, বেজড়া-নারানদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য কাজ করছি।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল বলেন, আজ দুপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। স্কুলের মাঠ থেকে পানি নামানোর জন্য তারা প্রাথমিকভাবে পদক্ষেপ নেবেন।

আরএআর