সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ সড়কের পাঙ্গাসী মৎস্য আড়তের পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ শাহজামাল শেখ। পাশেই বসে আছেন তার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেগম (৫৫)। কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতেই চোখের পানি ছেড়ে দেন বৃদ্ধ শাহজামাল। 

এভাবে এখানে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে হাত দিয়ে দৃষ্টি আড়াল করে চোখ মুছতে মুছতে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, যে বাবার তার সন্তানের হাতে মার খেতে হয় তার জীবনে আর এখান সেখান কি বাবা। এই বলেই আবার চোখ মুছতে লাগলেন বৃদ্ধ শাহজামাল। এ সময় পাশ থেকে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন স্ত্রী শামসুন্নাহার। 

শাহজামাল বলেন, ১৫ বছর আগে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম সুখের আশায়। আজ সেই ছেলেই ১৫ বছর পরে দেশে ফিরে আমাকে শারীরিক ও মানসিক আঘাত করেছে। 

এই দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ইছামতি হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা। এখানে এসেছেন এনজিও থেকে ঋণের টাকা তুলতে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রবাসী ছেলে শাহিদুল ইসলামের (৪০) হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাবা শাহজামাল শেখ। 

ঘটনার সত্যতা জানতে সন্ধ্যার আগে ইছামতি হিন্দুপাড়ায় বাড়ির সামনেতেই দেখা হলো শাহজামাল শেখের বিদেশফেরত ছেলে শাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেও বাধ সাধলেন তার স্ত্রী। কথা থাকলে এখানেই বলতে হবে। পরে এক প্রতিবেশীর আহ্বানে তার বাড়িতে বসে কথা হয় শাহিদুলের সঙ্গে। তার বাবা শাহজামাল শেখ বাড়িতে এসে মাঠে গেছেন গরু আনতে। 

শাহিদুল ইসলাম বাবার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে ও ধাক্কা দিয়েছি। কিন্তু শরীরে আঘাত করিনি। 

অভিযুক্ত ছেলে শাহিদুল ইসলাম (বাঁয়ে) 

এদিকে মাঠে খবর পাঠিয়ে ডেকে আনা হলো বাবা শাহজামাল শেখকে। ছেলের সঙ্গে পাশাপাশি বসানো হলো তাকে। মারধরের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথমে লজ্জায় মাথা নিচু করে নীরব থাকেন বৃদ্ধ বাবা। এরপর স্বীকার করে বলেন, আজকেই প্রথম মেরেছে। এর আগে কখনো এমনটি হয়নি। এই বলে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বাইরে চলে যান। 
 
তাদের এক প্রতিবেশী বলেন, আমি সকালে বাবা-ছেলের ঝগড়া শুনেছি। আমি তাদের নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা শোনেনি। তবে ছেলে বাবাকে আঘাত করবে এটা ঠিক নয়। 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বাগবাটি ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. মঞ্জুরুল হক ও বাগবাটি ইউপির চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।  

বাগবাটি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর মোর্শেদ সজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সন্তানকে এতো কষ্ট করে বড় করার পর সন্তানের কাছ থেকে এমনটা মোটেও আশা করা যায় না। কোনো সন্তান তার বাবাকে নির্যাতন করবে এটা সম্পূর্ণ অনুচিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে কোনো অভিযোগ আসে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর