জুড়ির কমলাবাগানের কমলা

এবার পানিসংকটে গাছে টিকতে পারেনি কমলা। অন্যদিকে কমলা চাষের জমি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে চাষিদের মনে। সব মিলেয়ে জুড়ির কমলা বাগান হয়ে উঠেছে এক নৈরাশ্যের। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন যেন কমলার রাজ্য। এই ইউনিয়নের রূপাছড়া, লালছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, কচুরগুল গ্রামে কমলা বাগানে ভরপুর।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১৪২ হেক্টর জমিতে ১৯৩টি কমলা বাগান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৯১ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয় জুড়ী উপজেলায়। বড়লেখায় ২৫ হেক্টর, কুলাউড়ায় ১৭ হেক্টর, সদরে ১ দশমিক ৫, শ্রীমঙ্গলে ৬, কমলগঞ্জে ১ ও রাজনগরে শূন্য দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয়।

যখন গাছে কমলার মুকুল আসে, ফুল দেয় বা মটরদানার মতো হয়, তখন সেচের খুব প্রয়োজন হয়। ওই সময় আমরা সেচ দিতে পারি না, সে জন্য কমলার আকার ছোট হয়। আবার ছোট কমলাগুলো ঝরে পড়ে। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের যদি পানির সুবিধা করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আরও বেশি বেশি চাষ করতে পারতাম।

মোরশেদ মিয়া, কমলাচাষি

এবারের কমলার মৌসুমের শুরুতে পানির অভাব দেখা দেয়। নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি হয়নি। এতে ভালো ফলন পাননি চাষিরা। দুর্গম পাহাড়ি এই অঞ্চলে একে তো যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল আর উন্নত প্রযুক্তিরও কোনো ছোঁয়া নেই। এখন কমলা চাষের জমি হারানোর আশঙ্কা করছেন চাষিরা। জুড়ির শুকনাছড় গ্রামের মোরশেদ মিয়ার বাগানে এ বছর তুলনামূলক কম কমলা এসেছে। এ কারণ হিসেবে তিনি সেচব্যবস্থা না থাকা ও অজানা রোগের হানাকে দুষছেন।

মোরশেদ মিয়া বলেন, যখন গাছে কমলার মুকুল আসে, ফুল দেয় বা মটরদানার মতো হয়, তখন সেচের খুব প্রয়োজন হয়। ওই সময় আমরা সেচ দিতে পারি না, সে জন্য কমলার আকার ছোট হয়। আবার ছোট কমলাগুলো ঝরে পড়ে। আমরা বাগানে নিয়মিত দুজন শ্রমিক কাজ করেন। আবার কমলার মৌসুমে সাত থেকে আটজন শ্রমিক মিলে বাগানে গাছগুলোর পরিচর্যা করেন। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের যদি পানির সুবিধা করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আরও বেশি বেশি চাষ করতে পারতাম। বিশেষ করে একধরনের পোকার জন্য কমলা ঝরে পড়ে। এ বছর প্রচুর কমলা নষ্ট হয়েছে এ রকম। এক দিনে ঝরে পড়েছে ৩৫০টি কমলা। এ রকম প্রতিদিনই পড়ছে বলে জানান মোরশেদ মিয়া।

জুড়ির গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন যেন কমলার রাজ্য

কমলাচাষিদের আরেক অজানা দুঃখের কথা জানান মোরশেদ, আমাদের এলাকায় সাফারি পার্ক হবে বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে। এখন যদি আমাদের শতাধিক বাগান এই সাফারি পার্কের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এখানে কমলা চাষ বন্ধ হয়ে যাবে। যদি সরকার এটা বিবেচনা করে, তাহলে আমরা কমলাচাষিরা বাঁচব।

লালছড়া গ্রামের চাষি জয়নুল ইসলাম বলেন, গত বছর যে রকম ফল আসছিল, এবার তা নেই। যখন ফুল আসে, তখন মেঘ নেই। পরে খরায় আরও জ্বলে গেছে বাগান। তারপরও যদি সেচের ব্যবস্থা থাকত, সঠিক সময়ে পানি দেওয়া যেত, তাহলে মোটামুটি ভালো ফলন হতো। শুধু আমি নয়, অত্র এলাকার সব কৃষকই এবার
হতাশ।

গ্রীষ্ম মৌসুমে একটু সেচের সমস্যা হয়, যদি বৃষ্টি কম হয়। কীভাবে সেচ দিতে হবে, সেটা আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যারা সেটা অনুসরণ করছেন, তারা গাছগুলো রক্ষা করতে পেরেছেন। তারপরও কীভাবে সেচসুবিধা দেওয়া যায়, সেটাও আমরা প্রকল্প করে ব্যবস্থা নেব।

কাজী লুৎফুল বারী, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

এ ব্যাপারে স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমলা চাষে শুধুই লস। অনেক কৃষক আছেন শুধু কমলার দিকে তাকিয়ে আছেন। বছর শেষে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ওই কৃষক পরিবারের অভাব কোনোভাবে দূর হয় না। কারণ হচ্ছে সঠিক যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকা। বিভিন্ন রোগের আক্রমণের ফলে গাছ মরে যাওয়া। ইদানীং সেচের অভাবে ভালো ফল আসছে না।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে একটু সেচের সমস্যা হয়, যদি বৃষ্টি কম হয়। কীভাবে সেচ দিতে হবে, সেটা আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যারা সেটা অনুসরণ করছেন, তারা গাছগুলো রক্ষা করতে পেরেছেন। তারপরও কীভাবে সেচসুবিধা দেওয়া যায়, সেটাও আমরা প্রকল্প করে ব্যবস্থা নেব। ভবিষ্যতে হয়তো সেচযন্ত্রের সরবরাহ করা যেতে পারে। কমলা চাষের জমিগুলো বন বিভাগের। সরকার কমলাচাষিদের রক্ষার জন্য বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আমি মনে করি।

এনএ