একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হন নাটোরের লালপুরের সোহাগী বেগম (৬২)। একজন নারী হিসেবে তখন অমূল্য ত্যাগ স্বীকার করলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি তিনি। বরং এই বয়সে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবন চালাচ্ছেন সোহাগী।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল নাটোরের লালপুর উপজেলার মধুবাড়ী গ্রামে অতর্কিতে হানা দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা। তখন ১৩ বছর বয়সী সোহাগী বেগম নরপিশাচদের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। 

স্বাধীন দেশে যখন নির্যাতিতা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সরকারি ঘোষণা আসে, তখন সোহাগী স্বপ্ন দেখেন ভালোভাবে বেঁচে থাকার। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার ধরনা দেওয়ার পরও তার স্বীকৃতি মেলেনি।

প্রায় ১৫ বছর আগে মারা যান সোহাগীর স্বামী। একমাত্র সন্তান দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত সংসার। তাই ভিক্ষা করা শুরু করেন সোহাগী বেগম।

সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেন তাঁকে। তবে স্থানীয় শুভাকাঙ্ক্ষীরা চান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই বছরেই যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পান সোহাগী বেগম।

এ বিষয়ে সোহাগী বেগমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কেবল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করেন। কোনো কথা বলতে পারেন না।

তার ছোট ছেলে সাজদার রহমান বলেন, দিনমজুরির কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাই। ছোট বেলায় বাবা ও বড় ভাইসহ এলাকার মানুষের মুখে শুনেছি, ১৯৭১ সালের আনুমানিক ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আমার মা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণামূলক বিভিন্ন লেখায় তার মা সোহাগী বেগমের নির্যাতনের কথা উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) শাম্মী আক্তার বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেব।

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ইতিমধ্যে তাকে একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম যেন তালিকায় আসে সেজন্য যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা করব। আশা করি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা পাবেন তিনি। 

তাপস কুমার/এনএ/জেএস