প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নোয়াখালীর চরাঞ্চলের অনেক স্কুলেই শিক্ষার্থী উপস্থিতি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ছাত্রীদের অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। ছাত্ররা নদীতে মাছ ধরা এবং বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে পড়েছে। আবার কারও কারও স্কুল নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নে হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ভূমিহীন বাজার দাখিল মাদরাসাসহ চরাঞ্চলের সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেক কম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ভালো থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের চিত্র হতাশাজনক।

ভূমিহীন বাজার দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী আমিনা আক্তার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার ছুটিতে আমার অনেক সহপাঠীর বিয়ে হয়ে গেছে। ক্লাসে এসে দেখি অনেকেই নেই। 

হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আরিফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় আমি ফুচকা বিক্রি করি। পাশাপাশি আমড়াও বিক্রি করি। 

হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইয়াসিন ফারুক বলেন, আমাদের স্কুলে ৫০০ এর বেশি শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু করোনায় অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। আবার অনেকে কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। তাই স্কুলটিতে উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, গেল কয়েক বছরে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে ছয়টি বিদ্যালয়। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার সুযোগ নেই। করোনার সময় মাদরাসা খোলা থাকায় অনেকে মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে।

মেয়েকে করোনায় বিয়ে দেওয়া এক অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়েকে চট্টগ্রামে বিয়ে দিয়েছি। সে স্বামীসহ সেখানে গার্মেন্টসে চাকরি করে। এখন তার শ্বশুরকে বলেছি, মেয়েটাকে এসএসসি পাস করাতে চাই। কিন্তু তারা কিছুই বলছে না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে এখনও কোনো সরকারি নির্দেশনা আসেনি। চরাঞ্চচলে করোনাকালে অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ওপরের শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর পাঠ নিতে সমস্যা হচ্ছে। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া এবং দারিদ্র্য মোকাবিলা- দুটোকে সমন্বয় করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। 

হাসিব আল আমিন/এসপি