প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি

বিরামপুর উপজেলার খাঁনপুরের বাসিন্দা জন্মান্ধ সামসুল আলম। মুখে একটা পান গুজে হাসতে হাসতে বললেন, পেটের ক্ষুধা গাও করে মিটাও কিন্তু বাড়ির ক্ষুধা মিটপার পাওনা (পারিনা)। শেখের বেটি হাসিনা মাও মোক দালানের ঘর বানি দিবে। ওপর থেকে স্যার আসি কয়া গেছিল। আর কদিন পর নাকি হামাক ওই বাড়িত নিয়া যাবে।

বয়সের ভারে নূয়ে পড়া জন্মান্ধ সামসুল আলম প্রায় ৪৫ বছর ধরে সরকারি জমিতে টিনের ছাউনি দিয়ে কোনোমতো জীবনযাপন করছিলেন। সারাদিন গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে চলে তার সংসার। মাথার ওপর  টিনের সেই ছাউনি দিয়ে কখন সূর্যের আলো আর রাতে চাঁদের আলো ঘরে উঁকি মারে। স্বামী-স্ত্রীর সংসারে সন্তান না থাকলেও অভাব তাদের পিছু ছাড়েনি। 

শুধু সামসুল নয়, পাশের বাড়িতেই আছেন আর এক অন্ধ মোকলেছুর রহমান। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে লক্ষীরাম বাবুর জমিদার বাড়ির সরকারি জমিতে টিনের ছাউনি করে আছি। আমার আগের বাড়ি ছিল পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার ৩ নম্বর গোলাপগঞ্জ রঘুনাথপুর এলাকায়। সেখানেও অন্যের জায়গায় বসবাস করেছিলাম। ইউএনও স্যার আছিল। কয়া গেয়ে হামাক থাকবার জন্য একটা বাড়ি বানাওচে।

অন্ধ মোকলেছুর আর সামসুল নয় এবার উপজেলায় ৪১৫ জন ব্যক্তিকে তাদের থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর তুলে দেওয়া হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে।

জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার (২৩ জানুয়ারি) দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পাবেন ৪৭৬৪ পরিবার। এরই মধ্যে অধিকাংশ বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্মাণ কাজ শেষ এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায়।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ১৩ উপজেলায় ৪ হাজার ৭৬৪টি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সকল ঘর ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ২৮০টি, বিরল উপজেলায় ৫৫৬, বোচাগঞ্জে ৪৩০, কাহারোলে ১৩৯, বীরগঞ্জে ৩৫০, খানসামায় ৪১০, চিরিরবন্দরে ২১৫, পার্বতীপুরে ২৬২, ফুলবাড়িতে ৭৬৯, নবাবগঞ্জে ২২৬, বিরামপুরে ৪১৫ এবং হাকিমপুরে ১৪৫টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরগুলো নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

এদিকে, সদর উপজেলায় খাঁনপুর ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা থেকে বেশ দূরে মাঠের মাঝখানে একটি পুকুর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ২৬টি বাড়ি। বাড়িগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে লাল রংঙের টিন। দুই রুম বিশিষ্ট বাড়িতে রয়েছে একটি রান্নাঘর ও টয়লেট। বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে।

ওই বসতির আদিবাসী সুবাস হেমরম বলেন, সরকার হামাক বাড়ি করি দেওছে। কিন্তু হামার আস্তাত (রাস্তা) ওঠার জায়গা নেই। তাই সরকারের কাছে দাবি হামাক একটা রাস্তা তৈরি করে দেক।

বিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাওসার আলী বলেন,‘ঘরগুলো নির্মাণ কাজের শুরু থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই উপস্থিত হয়ে দেখভাল করছেন।কাজের যেন কোনো অনিয়ম না হয় সেইদিকে সব সময় তিনি নজর রাখছেন। সঠিক সময়ের মধ্যেই ঘরগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলায় ৪৭৬৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন ওই ঘর। খুব দ্রুতই নির্মাণ কাজ শেষ করে ঘরগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এসপি