হারানো ফোন উদ্ধার করে তুলে দেওয়া হচ্ছে ভুক্তভোগীর হাতে

গত এক বছরে চুরি-ছিনতাই বা হারিয়ে যাওয়া ৮২০টি মোবাইল ফোনের মধ্যে ৭৫০টিই উদ্ধার করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। বাকি ফোনগুলো উদ্ধারেরও চেষ্টা চলছে। এ সফলতার পেছনে রয়েছে রাজশাহী নগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এরপর থেকেই সাইবার অপরাধ দমন, ক্লু-লেস ঘটনা উদঘাটন, অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে ভূমিকা রাখছে এ ইউনিট।

আরএমপি জানায়, গত এক বছরে এক হাজার ৩২১টি অভিযোগ এসেছে তাদের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে। এর মধ্যে এক হাজার ২৩০টির নিষ্পত্তি হয়েছে। আরএমপির এ ইউনিটের সফলতার হার ৯৩ শতাংশেরও বেশি।

নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আরএমপি কমিশনার হিসেবে যোগ দেন আবু কালাম সিদ্দিক। তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং পুলিশি সেবা নগরবাসীর দোরগড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেন। প্রযুক্তিনির্ভর ও ইন্টেলিজেন্সভিত্তিক পুলিশি সেবা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। সাত দিনের মাথায় ১৭ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয় স্বতন্ত্র সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে একজন এস আই, একজন এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল নিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন এ ইউনিটের সদস্য সংখ্যা ১৩। প্রত্যেকই সাইবার অপরাধ দমনে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত। যে কোনো সাইবার অপরাধ দমনে এরইমধ্যে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে আরএমপির বিশেষ এ ইউনিট।

তিনি বলেন, গত এক বছরে রাজশাহী নগরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ৩৬০টি ফেসবুক সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এসেছে এ ইউনিটে। এসব অভিযোগের মধ্যে নারীদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করা, ফেসবুকে যে কারো ছবি দিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও দিয়ে মানহানি করা, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা, বিভিন্ন ভুয়া মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পর্ণ ছবি ও ভিডিও পাঠানো উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ৩৪০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

এক বছরে ভুয়া অফারের মাধ্যমে পিনকোড নিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্ট হ্যাক, ভুয়া রেজিস্ট্রেশন, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিকাশ, নগদ ও রকেট চক্রের ফাঁদসহ অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ এসেছে ৫০টি। এরইমধ্যে সবগুলো অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে আরএমপির এ ইউনিট।

ইমো ব্যবহার করে সম্পর্ক স্থাপন ও আর্থিক প্রতারণার মতো অভিযোগ এসেছিল তিনটি। সবগুলো অভিযোগই নিষ্পত্তি হয়েছে। সাবেক প্রেমিক কিংবা প্রেমিকাকে হেনস্থা বা ব্ল্যাকমেলের উদ্দেশ্যে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের ছবি বা ভিডিও প্রচারের দায়ে পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত অভিযোগ আসে ৫০টি। প্রত্যেক অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেফতারে সাইবার ক্রাইম ইউনিট সহায়তা করে।

ই-মেইল হ্যাক করে বিভিন্ন অপ্রীতিকর তথ্য পাঠানো ও ভুয়া বা বেনামে মেইল আইডি খুলে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ এসেছিল তিনটি। এর মধ্যে দুটি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে এরইমধ্যে। এছাড়া টিকটক বা লাইকির মতো অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করার অভিযোগ ছিল পাঁচটি। এরইমধ্যে সবগুলো অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।

অল্পবয়সী মেয়ে বা ছেলেদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে প্রলোভন দিয়ে অপহরণসহ বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে অপহরণের অভিযোগ ছিল ৩০টি। প্রত্যেক ভিকটিমকে উদ্ধার এবং অপরাধী শনাক্ত করে গ্রেফতারে সহায়তা দিয়েছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

নগর পুলিশের মুখপাত্র বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে দেশে সর্বপ্রথম কিশোরদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে আরএমপি। নগর এলাকার প্রায় ৫০০ কিশোরের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে এ তথ্য ভাণ্ডারে। নগর এলাকার নয়টির মতো কিশোর গ্যাংয়ের তথ্যও আছে এ ডাটাবেজে। তালিকায় থাকা কিশোরদের তদারকিও করছে আরএমপি। এ কার্যক্রম চলছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট থেকেই।

এছাড়া, সাইবার ক্রাইম ইউনিট থেকে পরিচালিত হচ্ছে ‘হ্যালো আরএমপি’ অ্যাপ। এখানে পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন অভিযোগ ও তথ্য দিচ্ছেন নাগরিকরা। এ পর্যন্ত ২২৪টি অভিযোগ এসেছে এ অ্যাপে। প্রত্যেকটি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর বাইরেও এ অ্যাপে মিলছে নগর পুলিশের বিভিন্ন সেবা।

গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, রাজশাহী নগরে অপরাধ করে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই। পুরো নগরীতে বসানো হয়েছে ৫০০ সিসি ক্যামেরা। অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারে বসে সার্বক্ষণিক এ ক্যামেরায় চোখ রাখছেন নগর পুলিশের সদস্যরা। নগরীর সার্বিক আইন শৃঙ্খলা মনিটরিং, বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে এ কার্যক্রমও পরিচালনা করছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট নীরবে নগর এলাকার জঙ্গি ও রাষ্ট্রবিরোধীদের শনাক্তসহ অন্য সব অপরাধ ও অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। অভিযোগ কিংবা সহায়তার জন্য যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের হটলাইনে (০১৩২০০৬১৯৯৯)। যোগাযোগ করা যাবে ইউনিট প্রধান ও সহকারী পুলিশ কমিশনারের নম্বরে (০১৩২০০৬১৯৮৩)। এ ইউনিট রাজশাহী মহানগরবাসীর সেবায় সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন নগর পুলিশের মুখপাত্র।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএইচ