স্বামী জীবিত আছেন। তবু ১৭ বছর ধরে বিধবাভাতা পাচ্ছেন মনজিলা বেগম। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর বিধবা ভাতার কার্ডটি বাতিল করছে উপজেলা সমাজসেবা বিভাগ। 

জেলার সৈয়দপুর উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়ের দোলাপাড়া এলাকার মৃত নাসিম উদ্দিনের মেয়ে মনজিলা বেগম। বর্তমানে তিনি বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। তার স্বামীর নাম আবু তাহের। স্বামীর বাড়ি দিনাজপুর জেলার রানীরবন্দর উপজেলায়।

মনজিলা বেগমের দাবি, ২৮ বছর আগে তার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার রাণীরবন্দর উপজেলায়। বিয়ের দেড় বছর পর থেকেই স্বামী নিখোঁজ রয়েছেন। গর্ভবতী অবস্থায় বাবার বাসায় আসেন তিনি। এরপর এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। প্রায় ১০ বছর নিখোঁজ থাকার পর ২০০৪ সালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও চেয়ারম্যান তাকে স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার কার্ড করে দেন। তখন থেকেই নিয়মিত টাকা পেয়ে আসছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, দেড় বছর আগে প্রায় ২০ বছর পর তার স্বামী আবু তাহের ফিরে এসেছেন তার কাছে। এর মাঝে বেশ কয়েকবার এখানে ছিলেন। তিনি রংপুরে আরেকটি বিয়ে করেছেন। সেখানে তার স্ত্রী-সন্তান আছে।

মনজিলা বেগম বলেন, আমার স্বামী এতদিন ধরে নিখোঁজ ছিল। এখন সে এসেছে। কিন্তু আমায় দেখে না, খরচ দেয় না, খোঁজখবর রাখে না। সে এখন তার নতুন সংসার নিয়া ব্যস্ত।

প্রতিবেশী মজেদা খাতুন জানান, মনজিলা বেগমের স্বামী থেকেও নাই। তার স্বামী তাকে ভরণপোষণ দেয় না। কারণ তার অন্য সংসার আছে। আমরা মনজিলার স্বামী আবু তাহেরকে কখনো দেখি না এই এলাকায়। মনজিলার সংসার খুব কষ্ট করেই চলে। সে তাহলে কীভাবে চলবে?

লক্ষ্মণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রাণবেশ চন্দ্র বাগচী ঢাকা পোস্টকে জানান, কার্ডটি হয়েছে ২০০৪ সালে। তখন আমি পরিষদে ছিলাম না। আমি জেনেছি মনজিলার বেগমের স্বামী এখানে থাকেন না। তিনি স্বামী নিগৃহীতা হিসেবে ভাতা পাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ভাতার টাকা সমাজসেবা দফতর প্রদান করে, আমরা সত্যায়িত করি মাত্র। মনজিলা বেগমের স্বামী ফিরে এসেছেন, কিন্তু ভরণপোষণ দেন না। অন্যত্র তার সংসার আছে। যদি আইন অনুযায়ী ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়, তবে সমাজসেবা দফতর দিতে পারে। নতুবা বন্ধ করে দেবে।

সৈয়দপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকতা নুর মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে জানান, যেহেতু তার স্বামী নিখোঁজ ছিলেন, তাই তাকে স্বামী-পরিত্যক্তা ভাতা দেওয়া হয়েছিল। তার স্বামী প্রায় ২০ বছর পর ফিরে এসেছেন। কিন্তু গোপনে আরেক জায়গায় সংসার করছিলেন। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর আমরা ওই কার্ডটি বাতিল করছি, যা প্রক্রিয়াধীন আছে।

জেলা সমাজসেবা অধিদফতের সহকারী পরিচালক নুসরাত ফাতেমা জানান, অভিযুক্ত কার্ডটির অনুকূলে স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা দেওয়া হচ্ছিল। তার স্বামী ফিরে এসেছেন জানতে পেরে আমরা কার্ডটি অন্য আরেকজন বিধবার জন্য বরাদ্দ করব।

তিনি জানান, আইন অনুযায়ী কোনো নারীকে যদি তার স্বামী দুই বছর ভরণপোষণ না দেন বা অন্য কোনোভাবে পরিত্যক্ত হন, তবে তিনি স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা পাওয়ার যোগ্য হবেন। সেই হিসাবে মনজিলা বেগম কার্ড পাওয়ার যোগ্য ছিলেন।

মাহমুদ আল হাসান রাফিন/এনএ