রংপুরে দিন দিন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সংক্রমণ কমার সঙ্গে কমে এসেছে মৃত্যুও। এখন করোনায় আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ কারণে হাসপাতালে নেই রোগী নিয়ে দৌড়ঝাঁপ। অনেকটাই সুনসান নীরব পরিবেশ দেখা গেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে। সেখানকার করোনা ইউনিটটি গেল ছয় দিন ধরে রোগীশূন্য রয়েছে।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রমেক হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে করোনা ইউনিটে গিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে রোগীশূন্য হয়ে আছে ৭১ শয্যার ওই করোনা ইউনিট।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগী এখানে নেই। ছয় দিন ধরে করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি হননি। গুরুতর অবস্থা না হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালমুখী না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থাকছেন। এতে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমে এসেছে। দীর্ঘদিন পর টানা ছয় দিন করোনা ইউনিটে চিকিৎসক ও নার্সরা এখন স্বস্তিতে রয়েছেন।

হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মাহমুদ জানান, কিছু আগেও করোনা ইউনিটে অনেক রোগী ছিল। প্রতিদিন গুরুতর রোগীদের পাশাপাশি সামান্য অসুস্থ রোগীও হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু এখন আগের মতো চাপ নেই। অক্সিজেন নিয়ে কারো কোনো অভিযোগও নেই। এখন করোনা ইউনিটে কোনো রোগী না থাকায় একটু স্বস্তিতে রয়েছেন।  

রমেক অধ্যক্ষ নূরুন্নবী লাইজু জানান, গত জুলাই মাসে বিভাগজুড়ে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছিল। ওই সময়ে ডেডিকেটেক করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের বাহিরে রমেক হাসপাতালে ৭১ শয্যার করোনা ইউনিটটি চালু করা হয়। কিছুদিন আগেও সেখানে ৫০ জনের বেশি রোগী ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হওয়াতে এখন রোগী নেই। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে করোনা ইউনিটে কোনো রোগী ভর্তি হননি।

তিনি আরও বলেন, করোনো রোগীদের সেবা দিতে চিকিৎসক, নার্সদের অনেক কষ্ট হয়েছে। কিছুদিন আগে সেখানে অক্সিজেন পেতে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার প্রয়োজন ছিল। তখন নার্সরা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারেননি। তারা নিজেরাও আক্রান্ত হওয়া নিয়ে ভয়ে ছিলেন। এখন সেই চাপ নেই, কারো মধ্যে ভয়ও নেই।

এদিকে রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বলেন, ১৩ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর পর্যন্ত এক সপ্তাহে রংপুর জেলায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৫৯। অথচ এক মাস আগে জেলায় একদিনে শতাধিকেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এখন যারা নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন, তারা কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। এ কারণে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না।

২৪ ঘণ্টায় রংপুর জেলায় করোনা আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে করোনা সংক্রমিত ১৯ জন শনাক্ত হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন। এনিয়ে জেলায় করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৯১ জন। শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৩২১ জন রোগী। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৩১ জন সুস্থ হয়েছেন।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোতাহারুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন বয়সী মানুষকে টিকার আওতায় আনার ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমেছে। তবে সবাইকে সচেতন থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। এখন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর