সিরাজগঞ্জে রেস্টুরেন্টের খাবারের মান নিয়ে ভোক্তাদের ক্ষোভ
সিরাজগঞ্জ শহরে মুজিব সড়কে অবস্থিত ‘দা এপেটাইজার’ নামের একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে মেন্যু কার্ডের বিবরণ অনুযায়ী খাবার সরবরাহ না করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করেও কর্তৃপক্ষ থেকে এটা ভুল করে হয়েছে বললেও, পরে নেওয়া হয়েছে মেন্যু কার্ড অনুযায়ী বিল। এমনকি সেই খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভোক্তারা।
এ নিয়ে সিরাজগঞ্জ ফুডিস নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে দুটি পোস্ট করার পর সেখানে উঠে এসেছে এমন অসংখ্য ভোক্তার অভিযোগ। তারা লিখে জানিয়েছেন নিম্নমানের খাবার পাওয়ার ও রেস্টুরেন্টটি থেকে প্রাপ্ত বাজে ব্যবহারের কথা। পোস্টটি ঘিরে গ্রুপে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এমনকি কষ্টের টাকার সঙ্গে এমন প্রতারণা মেনে নেওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন একজন ব্যাংকার।
বিজ্ঞাপন
সিরাজগঞ্জের জনতা ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত দা এপেটাইজার রেস্টুরেন্টে পরিবারসহ রাতের খাবার খেতে যান তিনি। সেখানে রেস্টুরেন্টের সরবরাহকৃত মেন্যু কার্ড দেখে পরিবারের পাঁচজনের জন্য একটি স্পেশাল খাবারের প্যাকেজ অর্ডার করেন তিনি। সেখানে স্পেশাল নান অর্ডার করলেও নিম্নমানের একটি নানরুটি সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া অন্য সব খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
পঞ্চানন কুমার সাহা নামের এই ব্যাংকার আরও বলেন, কষ্টের টাকার সঙ্গে এই প্রতারণা মেনে নেওয়া যায় না, পরিবারসহ দা এপেটাইজার নামে রেস্টুরেন্টে যাই রাতের খাবার খেতে। সেখানে মেন্যু কার্ড অনুযায়ী ৪টি স্পেশাল নান উইথ মাটন মাসালা ও একটি স্পেশাল নান উইথ চিকেন মাসালার প্যাকেজ অর্ডার করি। কিন্তু খাবার পরিবেশনের পরে দেখি স্পেশাল তো দূরে থাক, নামেমাত্র নিম্নমানের নান সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাবারের মান দারুণ বাজে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। সেই তুলনায় অনেক বেশি মূল্য ধরা হয়। ভোক্তাদের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
সিরাজগঞ্জ ফুডিস গ্রুপের পোস্টটিতে অনেকেই অনেক রকমের মন্তব্য ও নিজেদের বিব্রত ও প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে আব্দুল বাকি মিয়া নামের একজন লিখেছেন, একদম জঘন্য বাজে ফাস্ট ফুড এটা। শামিমা প্রমা নামের একজন নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, চিকেন শর্মা ও নান হোম ডেলিভারি নিয়েছিলাম, যাতে একটা শক্ত নানের ভেতরে একটু চিকেন দিয়ে রাখছে, যা দিয়ে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল, খেতে পারিনি, ফেলে দিয়েছি। রিভিউ দিতে গিয়েও দিইনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তুষ্টি ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, যতবারই গিয়েছি খুব খারাপ খাবার পেয়েছি। নয়নিকা নিপা লিখেছেন, খুব বাজে খাবার ছিল। নানে একটা বাজে গন্ধ ছিল লিখে বলেন, খাওয়ার মুডটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শামসুজ্জামান শামীম নামের একজন লিখেছেন, পুরাই ফালতু একটা রেস্টুরেন্ট। ইসমাইল হাসান রাহাত লিখেছেন, চিকেন ফ্রাই নিয়েছিলাম। এর মান একদম বাজে। মিনহাজুল ইসলাম নাবিল তো তার চিজ বার্গার খাওয়ার বাজে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে লিখেই ফেলেছেন, এর চেয়ে বাজার থেকে মুরি কিনে বাসায় এসে পিঁয়াজ-মরিচ দিয়ে খাওয়াও ভালো।
সিরাজগঞ্জ সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সাথী রানী ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাই-বোনদের নিয়ে খুব আশা নিয়ে সেখানে খাবার খেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এতটা বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হবে ভাবিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একধরনের খাবারের অর্ডার নিয়ে অন্য নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করাটা অবশ্যই প্রতারণার মধ্যেই পড়ে।
সব অভিযোগের বিষয়ে দা এপেটাইজার রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী সাজিদুল কামাল আরিফ বলেন, খাবার সব সময় এক রকম হয় না। তবে স্পেশাল নানের স্থলে সাধারণ নান দেওয়াটা আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল ছিল। তাহলে কেন স্পেশাল নানের বিল নেওয়া হলো, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে অনেকেরই খারাপ ব্যবহার ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, একেকজনের রুচি একেক রকমের, তাই এমনটা হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এসব বিষয় নিয়ে সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছে। মেন্যু কার্ডের বিবরণী অনুযায়ী অর্ডার নিয়ে এর বাইরে ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করার কোনো অবকাশ কারও নেই। এটা হয়ে থাকলে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযোগ করার পরামর্শও দেন তিনি।
শুভ কুমার ঘোষ/এনএ