প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ১৪ বছর বয়সে গ্রামের বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান রাসেল মৃধা। ৯ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছিলেন। সেখানে বিয়ে করে দিব্যি সংসারও পাতেন। সেখানে দুই সন্তানও রয়েছে তার। অন্যদিকে তাকে (রাসেল মৃধা) অপহরণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৩ জন দফায় দফায় জেল খেটেছেন। অবশেষে আসামিপক্ষ রাসেল মৃধাকে উদ্ধারের পর বেরিয়ে এলো আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাসেল মৃধা নিজেও একটি অপহরণ মামলার আসামি। 

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে তোলা হলে অপহরণ মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটার অ্যাডভোকেট ফয়জুল হক ফয়েজ।

তিনি বলেন, ৯ বছর আত্মগোপনে থাকা রাসেল রাসেল মৃধাকে বেলা ১টার দিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালতের বিচারক মো. আবু শামীম আজাদ উভয়পক্ষের কথা শুনে রাসেল মৃধাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অ্যাডভোকেট ফয়জুল হক ফয়েজ বলেন, বাদীপক্ষ থেকে রাসেলকে নিজ জিম্মায় দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত সেই আবেদন স্থগিত করে অপর একটি অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই মামলায় রাসেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল।

গৌরনদী থানা পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালের ২৫ মার্চ কলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আকবর সরদারের ছেলে আলামিন সরদার বাদী হয়ে রাসেল মৃধা, তার বাবা জালাল মৃধা, চাচা আলাউদ্দিন মৃধা ও ছত্তার মৃধাকে আসামি করে তার ছোট ভাই খায়রুলকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। এই মামলায় রাসেলকে বুধবার গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাসেল মৃধা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণ চেষ্টার মামলা করার পরের মাসে অর্থাৎ ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ১৪ বছরের কিশোর রাসেল মৃধাকে অপহরণের অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেন তার মা মরিয়ম বেগম। ওই মামলায় তদন্ত করেন গৌরনদী থানার এসআই ফোরকান হোসেন। তিনি রাসেল মৃধাকে অপহৃত দেখিয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গৌরনদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফোরকান হোসেন বলেন, মামলাটি চারজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। আমার আগে তিনজন তদন্ত করেছেন। আমি ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেই। তদন্তে রাসেল মৃধাকে অপহরণের প্রমাণ পাই। তবে আমরা তাকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হই। আমার তদন্তে উঠে এসেছে রাসেলকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে হত্যা করার কোনো তথ্য চার্জশিটে উল্লেখ করিনি। তদন্তকালে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

এদিকে রাসেল অপহরণ মামলার আসামি এস রহমান মৃধার স্ত্রী নাসিমা বেগম জানান, রাসেলের স্বজনদের কাছ থেকেই রাসেলের সন্ধান পেয়েছেন তারা। এরপর ঢাকার রায়েরবাগ গিয়ে দেখতে পান রাসেল স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। পরে রাসেলকে অনুরোধ করা হলে তিনি নিজের ইচ্ছায় পুলিশের কাছে হাজির হন।

তিনি জানান, রাসেলের এই অপরহণ মামলায় তার স্বামীসহ পাঁচজন বিভিন্ন সময় জেল খেটেছেন। এছাড়া মামলার ১৪ আসামির সকলেই নানাভাবে ৯ বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ সময়কালে একটি হত্যা মামলাসহ মোট ৮টি মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলা থেকে তারা মুক্তি চান।

যদিও রাসেলের বোন তাসলিমা বলেন, আমার ভাই রাসেলকে দীর্ঘদিন ধরে এস রহমান মৃধা ও তার সন্তানর‍া অপরহণ করে রাখে। আমার ভাইকে এতোদিন পর পেয়েছি। এর আগে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলেও রাসেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উভয় মামলার বাদী-বিবাদীরা একই গ্রামের বাসিন্দা। মূলত তাদের মধ্যে কয়েক শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর