আদালতে মামলা করায় বাদীকে থানায় নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী বিনয় চন্দ্র শীল এ অভিযোগ করেন। 

বিনয় চন্দ্র শীল পেশায় একজন নরসুন্দর। তার বাড়ি সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলা-মাইঠা গ্রামে।

সংবাদ সম্মেলনে বিনয় চন্দ্র শীল বলেন, সম্প্রতি বরগুনার আদালতে আমি বালিয়াতলী ইউনিয়নের সাবেক নারী ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা খালেদা ইসলাম সুইটিকে বিবাদী করে অলিখিত রেপ কাগজ (কার্টিজ পেপার) উদ্ধারের একটি মামলা করি। মামলার প্রেক্ষিতে আমার স্বাক্ষর করা ওই কাগজ উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ওই মামলা তুলে নিতে খালেদা ইসলাম সুইটির পক্ষ নিয়ে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাইঠা স্ট্যান্ড থেকে জোরপূর্বক আমাকে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাত পর্যন্ত বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম আমাকে নির্যাতন করেন। নির্যাতানের সময় বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। এ সময় খালেদা ইসলাম সুইটিসহ তার পক্ষের লোকজন থানায় উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

বিনয় চন্দ্র শীল বলেন, নির্যাতনের কারণে বর্তমানে আমি হাঁটতে পারছি না এবং মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছি। সংবাদ সম্মেলন শেষে চিকিৎসার জন্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যাব। 

তিনি জানান, বেশ কিছুদিন ধরে স্ত্রী ও মাদকাসক্ত ছেলেদের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে। এ বিষয়ে সালিস বৈঠক হলে খালেদা ইসলাম সুইটি রোয়েদাদ লিখবেন বলে অলিখিত রেপ কাগজে (কার্টিজ পেপার) তার স্বাক্ষর নেন। পরে তার স্বাক্ষরযুক্ত ওই অলিখিত রেপ কাগজে জোরপূর্বক ও অন্যায়ভাবে তার ছেলে ও স্ত্রীর নামে জমি লিখে দিতে বলেন সুইটি। এতে তিনি রাজি না হয়ে তার স্বাক্ষরযুক্ত অলিখিত রেপ কাগজ ফেরত দেওয়ার জন্যে বারবার অনুরোধ করেন। কাগজ ফেরত না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি বরগুনার আদালতে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে বিবাদী করে তার স্বাক্ষরযুক্ত ওই অলিখিত রেপ কাগজ উদ্ধারে মামলা করেন।

বিনয় চন্দ্র শীল বলেন, পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবে, তা না করে উল্টো প্রতিপক্ষের পক্ষ নিয়ে আমাকে নির্যাতন করেছে। এ ঘটনার বিচার চান বিনয় চন্দ্র শীল। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিনয় চন্দ্র শীলের বৃদ্ধ বাবা বলরাম চন্দ্র শীল (৭৫) বলেন, তার ছেলের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় কোনো মামলা নেই। কোথাও কোনো অভিযোগও নেই। তারপরও তার ছেলেকে এভাবে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করার বিচার চান তিনি।

বিনয় চন্দ্র শীলের প্রতিবেশী মো. শহিদুল ইসলাম স্বপন (৪৮) জানান, বিনয় চন্দ্র শীলের সঙ্গে তার স্ত্রী কাজল রাণীর কলহের জের ধরে ছেলে বিশ্বজিৎ শীল (২২) প্রায়ই বাবাকে মারধর করেন। এসব বিষয় নিয়ে তারা অনেকবার তাদের মীমাংসা করার চেষ্টা করেছেন। 

এ বিষয়ে খালেদা ইসলাম সুইটি জানান, তার বিরুদ্ধে বিনয় চন্দ্র শীল যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। তাদের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসায় সালিস হয়েছে। রোয়েদাদ লেখার কাজ চলছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম বলেন, আমি ওইদিন রাত ১০টা থেকে অন্যত্র ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় ওসি (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম মামলার বাদী বিনয় চন্দ্র শীল এবং বিবাদী খালেদা ইসলাম সুইটিকে নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি।

এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে তারপর তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/আরএআর