পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী নূপুর (১০) গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। কারণ, চিকিৎসকরা তার রক্তে ইনফেকশন ধরা পড়েছে এবং তা ব্লাড ক্যানসার অথবা যক্ষ্মা হতে পারে বলে ধারণা করছেন। এ অবস্থায় তার কাঠমিস্ত্রি বাবা রতন আলীর পক্ষে ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা অসাধ্য হয়ে উঠেছে।
 
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন নূপুরের রক্তে প্রাথমিকভাবে ইনফেকশন বলে ধারণা করছেন বলে জানায় নূপুরের পরিবার। তবে নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন এই চিকিৎসক।

পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কারণে চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে পড়েছে। সন্তানকে চিকিৎসা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে না পেরে পরিবার চরম হতাশা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছেন। বাধ্য হয়ে কবিরাজি চিকিৎসা শুরু করেছেন তারা। তবে মেয়েকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য নূপুরের বাবা সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিছানায় শুয়ে তীব্র যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে নূপুর। গত জুলাই মাসের শুরুতে অসুস্থ হয়ে পড়া নূপুরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুই সপ্তাহ রেখে রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এতে পরিবার প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছে। যার বেশির ভাগই করতে হয়েছে ধারদেনা।

কিন্তু বাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১৫ হাজার টাকার মতো লাগবে। যা বাবা রতন কোনোভাবেই জোগাড় করতে পারছেন না। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে নূপুরকে স্থানীয় কবিরাজি চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু নূপুরের শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। দিন দিন শুকিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে নূপুর।

নূপুরের দাদা নজরুল ইসলাম বলেন, বসতভিটা ছাড়া তাদের কোনো জমিজমা নেই। অসুস্থতা ও বয়সের ভারে তিনিও আর কাজ করতে পারেন না। তাই কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যা আয় হয়, তা-ই দিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে হয় ছেলে রতনকে। আত্মীয়স্বজনের কাছে ধারদেনা করে টাকা নিয়ে এত দিন নাতনিকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু এখন আর কেউ ধার দিচ্ছে না। গ্রামের মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সে টাকায় রাজশাহী গিয়ে ডাক্তার দেখানো সম্ভব হচ্ছে না।

পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মী বিশ্বাস বলেন, নূপুর নাচে খুবই পারদর্শী ছিল। বিদ্যালয়ের হয়ে সে উপজেলা পর্যায়ে নাচে অংশগ্রহণ করেছিল। পড়াশোনায়ও সে মেধাবী। শিশুটির এমন অবস্থায় সব শিক্ষকরা মর্মাহত। তাকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজজমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে শিশুটির চিকিৎসায় সাধ্যমতো আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাকিবিল্লাহ বলেন, মেয়েটি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। খোঁজখবর নিয়েছি। আসলেই পরিবারটি অসহায় অবস্থায় আছে। আমার পক্ষ থেকে যতটুকু আর্থিক সহায়তা করা দরকার, সে অনুযায়ী করা হবে বলে জানান তিনি।

নূপরের বিষয়ে জানতে চাইলে তার বাবা রতন আলীর ০১৭৩৯৪৪৯২৩৪ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন।

রাকিব হাসনাত/এনএ