ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা ৪৫টি। তবে রোগী আছে প্রায় দুইশ। এক বেডেই তিনজন কিংবা দুইজন রোগীকে থাকতে হচ্ছে। একদিকে গরম অপরদিকে ওয়ার্ডে অতিরিক্ত ভিড়। তাই একটু স্বস্তি পেতে শিশুদের নিয়ে গাছতলায় বসেছেন অভিভাবকরা। 

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সামনে এমন চিত্র দেখা যায়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী থাকায় শিশু ওয়ার্ডের এক শয্যায় দুই থেকে তিনজন শিশুকে রাখা হচ্ছে। ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও অভিভাবকদের বসার জায়গায় রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। অতিরিক্ত গরম ও ওয়ার্ডে গাদাগাদির কারণে কিছুটা স্বস্তি পেতে শিশু ওয়ার্ডের বাহিরে গাছতলায় বিছানা পেতেছেন অনেকেই। এরপর চিকিৎসক আসলে ভেতরে গিয়ে শিশুকে দেখিয়ে এসে আবারও সেই গাছতলায় বসছেন। রাতে  হাসপাতালের অন্য পাকা জায়গায় অবস্থান নেন তারা। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গত সোমবার ভর্তি ছিল ২০৩ জন শিশু, মঙ্গলবার ভর্তি ছিল ১৯৩ শিশু। এই শিশুদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় ভুগছে।

শিশু ওয়ার্ডে সন্তানের চিকিৎসা করাতে এসেছেন সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়নের আয়েশা বেগম। তিনি বলেন,বেশ কিছুদিন ধরেই বাচ্চা অসুস্থ। গতকাল হাসপাতালেএসেছি। কিন্তু এখানে তো সিট নেই। এক বেডে দুইজন, কোনোটিতে তিনজন করে থাকতে হয়। দিনে প্রচণ্ড গরম, তাই কিছুটা স্বস্তি পেতে গাছতলায় বসে আছি।

গাছতলায় শিশুকে নিয়ে বসে রয়েছেন আহসান আলী নামে এক বাবা। একটি পাটির ওপর বসে রয়েছেন তিনি। পাশেই শুয়ে আছে তার মেয়ে আম্বিয়া ও স্ত্রী। আহসান আলী বলেন, মেয়ের ডায়রিয়া হয়েছে তাই হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি জায়গা সংকট। জায়গা পেলেও এক বিছানায় ২/৩ জন করে থাকতে হচ্ছে। আবার অতিরিক্ত গরম। রুমে তো থাকাই যায় না। তাই উপায় না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে গাছতলায় কাঁথা ও লেপ বিছিয়ে বিছানা পেতে আছি।  ডাক্তার আসলে ভেতরে গিয়ে দেখিয়ে আবারও এখানে এসে বসি। গাছের নিচে ঠাণ্ডা বাতাস আছে।
 
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঠাকুরগাঁওয়ে দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরম পড়ছে। আবার রাতে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের চিকিৎসক শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তাদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও পেটের ব্যথায় আক্রান্ত। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ৬০ থেকে ৭০ জন শিশু ভর্তি থাকে। এখন ১৭০ থেকে ১৮০ জন শিশু ভর্তি থাকছে। গতকাল ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ১৯৩ জন শিশু রোগী। এর মধ্যে নবজাতক ৩৬ জন। সবচেয়ে বেশি ৯৩ জন শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিজ চপল বলেন, হাসপাতালে শিশু রোগীর সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেকে তাদের শিশুদের এখানে এনে চিকিৎসা করান। এ কারণে এই হাসপাতালে সব সময় শিশু রোগীর চাপ থাকে। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় রোগীদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। মেঝেতে ও বারান্দায় থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। আমরা আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।

নাহিদ রেজা/আরএআর