প্রিয় বিদ্যালয়ের বিলীনে কাঁদছে শিক্ষার্থীরা
যে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কেটেছে তাদের শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো, সেই বিদ্যালয়ঘরটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, খবর শুনে ছুটে আসে প্রিয় বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে। ভবন ভেঙে নদীগর্ভে চলে যেতে দেখে কাঁদতে থাকে শিক্ষার্থীরা। অতীতের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত পড়ে তারা।
শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের ডান তীরের ১০০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ভেঙে নদীগর্ভে চলে যায় বিদ্যালয়টি। চরাঞ্চলের মানুষের সন্তানদের জ্ঞান অর্জনের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এটি। কিন্তু বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ায় শতাধিক কোমলমতির শিক্ষার্থীর লেখাপড়া এখন অনিশ্চিত।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় দেখা যায়, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মিজানপুরের এই চর সিলিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি ভেঙে নদীর মধ্যে পড়ে আছে। বিদ্যালয়টি একনজর দেখতে এলকাবাসীর পাশাপাশি ভিড় করেছে স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তাদের স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় বিদ্যালয়টির এই শেষ পরিণতি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে তারা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, এর আগে ভেঙে যাওয়ার আগে বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি ঝুঁকিতে থাকায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেখানে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রেখেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। আপাতত পাঠদান স্বাভাবিক রাখতে তারা বিদ্যালয়ের পাশেই একটি টিনশিড কক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার বিকেলে মূল ভবনটি নদীতে ধসে যাওয়ায় টিনশেডের ঘরটিও সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলে, বৃহস্পতিবার ও আমরা এখানে স্কুলের ভবনটি দেখেছি। শুক্রবারে স্কুল বন্ধ থাকায় আসা হয়নি। আজ সকালে এসে দেখি আমাদের স্কুল ভবনটি আর নেই। এটা আমাদের এলাকার একমাত্র স্কুল। তাও নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা এখন কোথায় পড়ব?
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বর্তমান রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজু ঢাকা পোস্টকে বলে, এই স্কুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার শৈশব-কৈশোরের অনেক স্মৃতি। স্কুলটি ভেঙে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকেই আমার মনটাও ভেঙে গেছে। আর কোনো দিন আমার প্রিয় স্কুলে আসতে পারব না। এটিকে দেখতে পাব না, এটা ভাবতে গেলেই অনেক কষ্ট হয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ইমান আলী ফকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে একদিন এই ভবনে ক্লাস হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ভাঙন দেখা দিলে পরবর্তীতে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় এখনে আর ক্লাস নেওয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, স্কুলের মালামাল পাশের টিনশেডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গতকাল বিকেলে স্কুলের মূল ভবনটি নদীগর্ভে চলে যায়। পাশের টিনশেডটিও ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় সেটাও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আপাতত নদীর পাড় থেকে দূরে একটা জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওইখানে অস্থায়ীভাবে পাঠদান করানো হবে।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুরু থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে অনিয়ম ছিল। তারা তাদের ইচ্ছেমতন কাজ করে গেছে। আমরা এলাকাবাসী কাজে বাধা দিলেও তারা পাত্তা না দিয়ে কাজ করে গেছে। সিসি ব্লকের নিচে কোনো গাইডওয়াল ও পাইলিং না করেই তারা আলগা মাটির ওপর ব্লক বসায়। এ কারণেই আজ স্কুলঘরসহ কয়েকটি বসতভিটা চোখের সামনেই নদীতে বিলীন হয়।
মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৩টি ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন ৭ নং ওয়ার্ডটাও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এতে এই ওয়ার্ডের আড়াই হাজার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে মানচিত্র থেকে মিজানপুর ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীর ভাঙন থেকে নদীর পারের মানুষকে রক্ষা করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি। প্রয়োজনে আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। আর ভেঙে যাওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিশ্চিত করার জন্য বিকল্প উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
মীর সামসুজ্জামান/এনএ