পাহাড় আর মেঘের অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা সাজেক ভ্যালি। যেকারো মন কেড়ে নেয় এই দৃশ্যপট। সাজেকের এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। 

সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার বাগাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ হচ্ছে বাঁশ ও ছন দিয়ে তৈরি রিসোর্ট এবং বাঁশের ভেতর রান্না করা খাবার। এ খাবারের রয়েছে অন্য রকম স্বাদ। তাইতো সাজেক গেলে কেউ এ খাবারের স্বাদ নিতে ভুল করেন না।  

বাঁশ দিয়ে সাধারণ ব্যাম্বো চিকেন, ব্যাম্বো বিরিয়ানি, ব্যাম্বো পিস ও ব্যাম্বো চা ও কফি তৈরি হয়। আর এ খাবার রান্না করা হয় বাঁশ যখন কোড়ল অবস্থায় থাকে। 

সাজেক ভ্যালিতে যেকোনো রেস্টুরেন্টে এমন খাবারের দেখা মেলে। তবে খেতে হলে অবশ্যই আগে থেকে অর্ডার করতে হয়। কারণ বাঁশে রান্না করা খাবার আগে থেকে তৈরি থাকে না। অর্ডারের পর রান্না করে গরম গরম পরিবেশন করে কর্তৃপক্ষ। এতে স্বাদে ভরপুর থাকে খাবারটি।

জানা গেছে, পাহাড়ে উৎপাদিত কাঁচা বাঁশ কেটে এনে তার একটি অংশ বাছাই করে এর ভেতরে রান্না করা হয়। রান্নার আগে সব কিছু গুছিয়ে নিতে হয়। প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হলে সব মিশিয়ে বাঁশের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে হয়। এরপর একটি অংশ আগুনে দিয়ে বাঁশটি চারপাশে ঘুরিয়ে ভেতরের খাবারগুলো সিদ্ধ করতে হয়। নির্দিষ্ট সময় পর বোঝা যায়, ভেতরে থাকা খাবার সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। তারপর পর্যটকদের সামনে বাঁশের ভেতর থেকে বাটিতে ঢেলে পরিবেশন করা হয়।

ব্যাম্বো চিকেন বিক্রি হয় ৬০০-৭৫০ টাকায়। এ খাবারটি চারজন খেতে পারেন। ব্যাম্বো বিরিয়ানি ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। যা দুজন পেটপুরে খেতে পারেন। ব্যাম্বো পিস বিক্রি হয় ৪৫০-৫০০ টাকায়। খেতে পারবেন চারজন।

বাঁশের ভেতর বিরিয়ানি রান্নার ক্ষেত্রে সব ধরনের মশলা, মাংস, তেল ও চাল মিশিয়ে বাঁশে ঢুকিয়ে আগুনে দেওয়া হয়। এ রান্নায় কোনো পানি দিতে হয় না। কাঁচা বাঁশের যে পানি থাকে তা দিয়েই বিরিয়ানি রান্না হয়ে যায়। স্বাদ হয় পাতিলে রান্নার চেয়ে দ্বিগুণ।

সাজেকে খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্যাম্বো চা। সবাই খুব মজা করে এ চা খায়। এ চা বানানোও সহজ। প্রথমে বাঁশের ভেতর দুধ, চিনি দেওয়া হয়। এরপর চায়ের লিকার দিয়ে লুইসাইদের তৈরি এক ধরনের কাঠি দিয়ে নাড়তে হয়। এভাবেই তৈরি হয় ব্যাম্বো চা।

সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক শামীমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে ব্যাম্বো চা খেয়েছি। এটির স্বাদ একটু আলাদা। আগে ভাবতাম কীভাবে খায় এই চা? এখন দেখছি আসলেই খুব টেস্ট। 

ভ্রমণপিপাসু মানুষের মন কেড়ে নেওয়া ব্যাম্বো কফি পাওয়া যায় ৪০ টাকায়। আর বিভিন্ন স্বাদের ব্যাম্বো চা পাওয়া যায় ২০ টাকায়। দামে কম মানে ভালো এই চা-কফি।

স্থানীয় আচিং মারমা বলেন, আমরা ছোট থেকেই বাঁশের ভেতর রান্না করা খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। এখন নিজেই এগুলো রান্না করতে পারি। পর্যটকরা অর্ডার করলে আমরা চেষ্টা করি পাহাড়ি রান্নার মূল স্বাদ যেন থাকে। পাহাড়ে বেড়াতে আসা লোকজন এ খাবার খেয়ে যেন সারা জীবন মনে রাখতে পারেন।

পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জানান, এখানে বাঁশের ভেতর রান্না করা খাবারের অনেক চাহিদা রয়েছে। আমরা নিজেরা যেভাবে খাই ঠিক সেভাবেই পর্যটকদের জন্য রান্না করি। যাতে করে ঘুরতে আসা পর্যটকরা পাহাড়ের স্বাদ নিতে পারেন ভালোভাবে। এ ধরনের রান্না করতে পাতিলের চেয়ে একটু বেশি কষ্ট হয়। কারণ চারপাশে ঘুরিয়ে আগুনের তাপ দিয়ে রান্না করতে হয়। তবে রান্না করতে কষ্ট যেমন হয় তার তুলনায় স্বাদ অনেক বেশি। তাইতো পাহাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এই খাবার।

জাফর সবুজ/এসপি