ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সেই বিদ্যালয়ের চিলেকোঠার ছাদের একাংশ ঠিকাদারের ভাঙার আগেই ভেঙে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা। এ বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে ছাদের বাকি অংশ ভেঙে ফেলেন।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে ঠিকাদারকে ছাদ ভাঙার জন্য যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, সেই চিঠিতেও ত্রুটিপূর্ণ ঢালাইয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে চিঠি পাওয়ার পরও ঠিকাদার ছাদ ভাঙতে গড়িমসি করেন, এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে নাসিরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী ভবনের নির্মাণকাজ পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেসার্স জমির-জুলিয়া ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলা এলজিইডির কাউকে না জানিয়েই ২২ আগস্ট চিলেকোঠার ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়।

পরদিন উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী ওমর ফারুক পরিদর্শনে গিয়ে ঢালাইকাজ ত্রুটিপূর্ণ দেখতে পান। এরপর ২৪ আগস্ট ঠিকাদারকে ত্রুটিপূর্ণ ঢালাই করা ছাদ ভাঙার জন্য চিঠি দেয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর। এ ফাঁকে ১০ সেপ্টেম্বর ওই ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। এরপর ছাদ ভেঙে পড়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে ঠিকাদার ছাদের বাকি অংশ ভাঙেন।

ঠিকাদারকে দেওয়া উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে ত্রুটিবিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। এগুলো হলো— সংশ্লিষ্ট কারিগরি কর্মকর্তাদের অবহিত না করে চিলেকোঠার ঢালাই সম্পাদন, মিকশ্চার মেশিন ছাড়া হাতে ঢালাইকাজ সম্পাদন, ভাইব্রেটর মেশিন সাইটে পরিলক্ষিত হয়নি এবং খোয়ার (ইট) মান নিম্নমানের পরিলক্ষিত হয়েছে। তাই ত্রুটিপূর্ণ ঢালাই অপসারণ করে উপজেলা প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাসিরনগর উপজেলা সদরের বাসিন্দা রতন দেবের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের। নাসিরনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই তার মুদি দোকান। তিনি বলেন, আমার দোকানের কাছ থেকে স্কুলটি দেখা যায়। যখন সেন্টারিং খোলা হচ্ছিল, তখনই ছাদের মাঝখান দিয়ে নিচের দিকে দেবে ভেঙে পড়ে। অনেক মানুষ সেই দৃশ্য দেখেছে। ঘটনা জানজানি হলে পরদিন ঠিকাদার ছাদের বাকি অংশ ভেঙে ফেলে।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মজিবুর রহমান বলেন, আমার বাড়ির উত্তর পাশে স্কুলটির অবস্থান। ওই দিন (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে দেখলাম স্কুলের ছাদের সেন্টারিং খুলছে। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। তখন যারা সেন্টারিং খুলছিল, তারা দেখছে ছাদা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা বেশি, তখন তারা আবার সেন্টারিং লাগানোর চেষ্টা করেছে। রাস্তার সব মানুষ সেই দৃশ্য দেখেছে। পরে যখন বুঝতে পারল পুরো ছাদ ভেঙে পড়বে, তখন পরদিন (১১ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঠিকাদার লোক লাগিয়ে ছাদের বাকি অংশ ভেঙে ফেলে।

তবে এ ব্যাপারে ঠিকাদার জমির উদ্দিন নিক্সন বলেন, ছাদ ভেঙে পড়ার ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। যেদিন (২২ আগস্ট) ছাদ ঢালাই করা হয়েছিল, সেদিন আমার এক চাচা মারা যান। সে জন্য আমি ইঞ্জিনিয়ারকে বলতে পারিনি। পরে ইঞ্জিনিয়ার গিয়ে ঢালাইকাজ দেখার পর আমাকে চিঠি ইস্যু করে যে ছাদ ভেঙে নতুন করে করার জন্য। চাচার দুর্ঘটনার কথা বলে ইঞ্জিনিয়ারকে অনুরোধ করার জন্য কয়েকটা দিন চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি রাজি হননি। পরে শ্রমিকদের বলে দিয়েছি ছাদ ভেঙে ফেলার জন্য।

নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাইফুল ইসলাম ছাদ ভাঙতে ঠিকাদারের গড়িমসির বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের না জানিয়ে ঢালাইয়ের কাজটি করা হয়েছে। সে জন্য আমরা তাকে ছাদ ভাঙার চিঠি দিয়েছি। খোয়ার মান আমাদের কাছে নিম্নমানের মনে হয়েছিল। মিকশ্চার মেশিন ও ভাইব্রেটর ছিল না।

বড় কথা হলো, আমাদের না জানিয়ে কাজটি করা হয়েছে। যে কারণে আমরা ভাঙতে বলেছি। না ভেঙে পার পাওয়া যায় কি না, সে জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন ঠিকাদার। কিন্তু আমরা তাকে ওই সুযোগ দিইনি। পরবর্তী সময়ে বাধ্য হয়ে তিনি ভেঙেছেন। ছাদ ধসে পড়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ডিসক্লেইমার

ফ্যাক্টওয়াচ টিম সংবাদের তথ্য ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করার সাথে সাথে ঢাকা পোস্ট টিম সংবাদের তথ্য আবারো যাচাই করে এবং এই সংবাদ প্রকাশ করে।

আজিজুল সঞ্চয়/এনএ