লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের হেলে পড়া ১০টি খুঁটির কারণে পাঁচ বছর ধরে পাঁচ একর জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। এলাকাবাসী ও কৃষি বিভাগের লোকজন একাধিকবার পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের দ্বারস্থ হলেও কোনো সুরাহা পাননি। উল্টো আরও ১০টি ছোট খুঁটি দিয়ে বড়গুলোকে হেলান দিয়ে রাখা হয়। এতে ২০ খুঁটির কারণে অনাবাদি পড়ে আছে উর্বর জমিগুলো।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রতনপুর মাদ্রাসার পাশে পাঁচ একর জমিতে পাঁচ বছর আগেও চাষাবাদ হতো। একদিন ১১ হাজার ভোল্টের তারসহ বিদ্যুতের ১০টি খুঁটি হেলে পড়ে। এরপর থেকে জমিতে যেতে কৃষকরা ভয় পাচ্ছেন। ফলে কৃষকরা ওই জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না এবং অনাবাদি থেকে যাচ্ছে একসময়ের উর্বর জমিগুলো।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করলেও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ খুঁটিগুলো ঠিক তো করেইনি, উল্টো আরও ২০টি ছোট খুঁটি দিয়ে বড় খুঁটিগুলোকে হেলান দিয়ে যায় তারা। সামান্য বাতাসে বৈদ্যুতিক তার গাছের ডালপালায় লাগলে আগুন জ্বলে ওঠে। ফসলি জমির পাশাপাশি কয়েকটি বাড়ির বাগানের দিকেও খুঁটিগুলো হেলে পড়েছে। এর থেকে রক্ষা পেতে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় একাধিকবার বিদ্যুৎ অফিসে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে কোনো সুরাহা পাননি দরিদ্র কৃষকরা।

রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন, জিয়া উদ্দিন ফাহাদ রিপন, বর্গাচাষি রহিম মিয়া, স্কুলছাত্র কাউসার হোসেন ও মাদ্রাসাছাত্রী আফসানা মিম ক্ষোভ প্রকাশ করে। জিয়া উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থলে তার আবাদি জমি রয়েছে। তিনি তার জমি কৃষকের কাছে বর্গা দিতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ভয়ে কোনো কৃষকই জমিটি বর্গা নিতে চাচ্ছে না।

বর্গাচাষি রহিম মিয়া জানান, প্রায় পাঁচ একর জমি বর্গা নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় ধান, ভুট্টাসহ শাকসবজি চাষ করতেন। ফসল ওঠার পর গবাদি পশুর বিচরণও ছিল। এখন ভয়ে গরু নামতে দেওয়া হচ্ছে না। হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তারের ভয়ে কেউই জমিতে নামতে রাজি হচ্ছে না।

মাদ্রাসাছাত্রী আফসানা মীম বলে, জমির পাশেই আমাদের বাড়ি। বৃষ্টি-ঝড় হলে বৈদ্যুতিক তারগুলো গাছের সঙ্গে লেগে যায়। এ সময় আগুন ধরে যায়। এটি দেখলে অনেক ভয় হয় আমাদের।

ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আবদুস সহিদ জানান, গত দুই বছর আগে তিনি বিএডিসির মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। খুঁটিগুলোর ভয়ে কৃষকরা বিশাল এ জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। দ্রুত খুঁটিগুলো ঠিক করলে জমিগুলো আবারও আগের মতো চাষাবাদ করতে পারবেন কৃষকরা।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবু তাহের ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি এর আগে কেউ আমাকে জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দ্রুত খুঁটিগুলো ঠিক করার ব্যবস্থা করা হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএ