কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫১টিতেই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে প্রধান শিক্ষক পদ। একই সঙ্গে সহকারী শিক্ষকের ৪৬টি ও দফতরি কাম প্রহরী পদ শূন্য রয়েছে ৩টি। আবার প্রতিটি বিদ্যালয়ে ন্যূনতম চারজন শিক্ষক থাকার বিধান থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিদ্যালয়গুলোয় রয়েছে দুই-তিনজন। এতে পাঠদানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৪৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান শিক্ষক ৫১টি এবং সহকারী শিক্ষকের ৪৬টি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এ ছাড়া কর্মরত শিক্ষকেরা বার্ষিক নিয়মিত ছুটি, মাতৃকালীন ছুটি এবং পিটিআই ট্রেনিংসহ উপজেলার রিসোর্স সেন্টারে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে থাকছেন। দাফতরিক কাজে অনেক প্রধান শিক্ষককে ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে অনেক বিদ্যালয়ে স্বল্প শিক্ষক দিয়ে করোনাকালীন কয়েকটি শিফটে ক্লাস চালিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

উপজেলার পান্টি বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীতামবরবশী, লক্ষ্মীপুর, জোতমোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকের পদ থাকলেও নেই শিক্ষক। ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার জন্য ডেপুটেশন নিয়ে অনেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। কেউ আবার মেডিকেল ছুটি কাটাচ্ছেন বছরের পর বছর। ফলে শিক্ষক-স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে মানসম্মত পাঠদান। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকবিহীন স্কুলগুলোয় অন্য শিক্ষকরা যাওয়া-আসা করেন ইচ্ছামতো।

পান্টি ইউনিয়নের পীতামবরবশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ে ২৩০ জন শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক নিয়োগের সাতটি পদের বিপরীতে আমিসহ শিক্ষক আছেন মাত্র দুজন। প্রায় ২০ বছর বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই। খুব বিপাকে আছি।

যদুবয়রা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৭ জন। শিক্ষকের পদ আছে নয়টি, বিপরীতে শিক্ষক আছে পাঁচজন। শিক্ষকের সংকট থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয়রা ও অভিভাবকেরা জানান, অনেক শিক্ষকই গ্রামীণ স্কুলগুলো থেকে শহরে বদলির চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। যাতায়াতের সুব্যবস্থা থাকার পরও গ্রামে স্থায়ী হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, ৫০০ কিংবা তার চেয়েও অধিক শিক্ষার্থীকে মাত্র দুই-তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করতে হয়। এতে পাঠদানে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলার ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ৩২ হাজার ২৭৬ ছাত্র-ছাত্রী। তার মধ্যে ছাত্র ১৫ হাজার ৩২৯ জন এবং ১৬ হাজার ৯৪৭ জন ছাত্রী।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো সবে খুলেছে আর আমি সদ্য যোগদান করেছি। শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যেখানে বেশি শিক্ষক আছেন, সেখান থেকে ডেপুটেশন করে শিক্ষক স্বল্প প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হবে।

রাজু আহমেদ/এনএ