১৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু, বদলে গেল তাদের জীবন
দিনাজপুর বিরল উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার)। এই সার তৈরিতে কাজ করছেন গ্রামের পুরুষ ও নারীরা। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের পুরুষ ও নারীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়। এই সার পরিবেশবান্ধব। তাই এটি ব্যবহারে শাকসবজির উৎপাদন অনেক বেশি হয়। কম্পোস্ট সারের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বিশেষ করে ছাদকৃষির জন্য এই সার বেশ উপকারী।
বিজ্ঞাপন
বিরল উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক পুতুল চন্দ্র দেব উৎপাদন করছেন কেঁচো সার। আর এই কেঁচো সারই তাকে এনে দিয়েছে সাফল্য। তার এই সাফল্যের পেছনের বড় কোনো পুঁজি বা উন্নত কোনো প্রযুক্তি নেই। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেন ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সারের।
বিজ্ঞাপন
পরে কৃষি কর্মকর্তা ১৫ হাজার টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে শুরু করেন কেঁচো সারের উৎপাদন। উৎপাদন হলে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেন কৃষি কর্মকর্তারা। এখন প্রতি মাসে ১ হাজার ৪০০ কেজির বেশি সার উৎপাদন করেন এবং প্রতি কেজি সার বিক্রি করেন ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে।
একই এলাকার লিপা রানী জানান, প্রথমে বিরল কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ঋণের মাধ্যমে নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন একটি কেঁচো সার তৈরির খামার। সেখানে নারীরা কাজ করে তারা উৎপাদিত সার নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি কেজি দরে বিক্রিও করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশে টিনের চালা দেওয়া ঘর। সাজিয়ে রেখেছেন সিমেন্টর তৈরি রিং। এতে গোবর, কলাগাছ ও কচুরিপানা মিশিয়ে তৈরি করছেন ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার। প্রতিটি রিংয়ে রয়েছে দুই কেজি করে কেঁচো আর এতে উৎপাদন হয় ৩০ কেজি কেঁচো সার। তারা নিজেদের পালন করা গরুর গোবর দিয়ে চলে সার তৈরির প্রক্রিয়া। সার তৈরি হয়ে গেলে নেট দিয়ে পরিষ্কার করেন নিজেরাই। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কৃষকেরা নিয়ে যান এসব সার।
পুতুল চন্দ্র দেব আরও বলেন, আমার এখানে কেঁচো আছে ৬০ কেজি। এখন পর্যন্ত ২৪০ কেজি কেঁচো ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আগামী দুই মাসে আমাকে ৪ হাজার কেজি সার দিতে হবে এক আলুচাষিকে। তিনি অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখছেন। প্রতিবছর ডিসি অফিস এক হাজার কেজি কেঁচো সার নেয় আমার কাছ থেকে। কৃষি অফিস এখন আমার কাছে থেকে কেঁচো কিনে। আমার কাছে সহযোগিতা নিয়ে এলাকার অনেকেই এখন কেঁচো সার উৎপাদন করছে।
কেঁচো তৈরির সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সার উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সংসারে এসেছে সুখ ও সচ্ছলতা।
বিরল উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ কর্মকর্তা কাওসার আহম্মেদ জানান, কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য প্রথমে উপজেলার কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ক্রমান্বয়ে এটি জনপ্রিয় হতে থাকে। এটি জমি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ছাদকৃষির জন্য এই সার অত্যন্ত কার্যকরী। এ ছাড়া এই সার উৎপাদন বেশ লাভজনক। প্রতি কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, দিনাজপুর জেলায় ২০০ কৃষক রয়েছেন, যরা কেঁচো সার উৎপাদন করেন। তাদের মধ্যে পাঁচ-ছয়জন বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করেন। কেঁচো জিবরাইলিক অ্যাসিড নামে একধরনের পদার্থ নিঃসরণ করে। গোবর ও পচনশীল উপাদানের সঙ্গে ওই অ্যাসিড মিশে গেলে ইউরিয়া, পটাশসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সারের সব গুণাগুণ একসঙ্গে পাওয়া যায়। এ জন্য জৈব কেঁচো সার ব্যবহার করলে আর অন্য কোনো সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। জমির গুণগত মানও ভালো থাকে।
এনএ