১৬ বছর ধরে বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসীদের সেবা করছেন জয়নাল আবেদীন (ডানে)

জয়নাল আবেদীন (৪৫)। বাবা সন্তোষ প্রামাণিক ও মা রোকেয়া বেগমকে নিয়ে পাবনার বেড়া থানার সাইন্দাইলপাড়া গ্রামে বাস করতেন। ২০০৬ সালের দিকে পাঁচ মাসের ব্যবধানে মারা যায় বাবা-মা। তাদের মৃত্যুশোক বার বার নাড়া দিচ্ছিল জয়নালকে। স্বাভাবিক হতে পারছিলেন না তিনি।

এরপর শোকার্ত জয়নাল কাজের সন্ধানে চলে আসেন গাজীপুর সদর উপজেলার মনিপুর তালতলী এলাকায়। সেখানে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিছু দিন পর জানতে পারেন, পাশেই রয়েছে ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’। ২০০৭ সালের প্রথম দিকে জয়নালের কাজের সুযোগ হয় সেই পুনবার্সন কেন্দ্রে। ১৬ বছর ধরে নিবাসীদের সেবা-যত্ন করে বাবা-মা হারানোর কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কথা হয় জয়নালের সঙ্গে। তিনি জানান, ছোটকাল থেকে মা-বাবার আদরে বড় হয়েছেন। বাবা-মা খুব কষ্টে করে বড় করেছেন তাকে। ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে তাঁদের সেবা করার। কিন্তু সে সুযোগ তৈরি হওয়ার আগে তাদের মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, বাবা-মায়ের কষ্ট হবে জেনে বাড়িতেই কৃষিকাজ করে চলছিলাম। ইচ্ছে ছিল বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে তাদের সেবা করব। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়নি। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে মা-বাবাকে হারায়। বাবা-মাকে সেবা করার একটা আক্ষেপ থেকেই যায়। পুনর্বাসন কেন্দ্রে চাকরি পাওয়ার পর ১৬ বছর ধরে নিবাসীদের সেবা-যত্ন করে সেই আক্ষেপটা পূরণ করছি।

গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া মনিপুর এলাকায় দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী গিভেন্সি গ্রুপের কর্ণধার খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন অসহায় প্রবীণদের জীবনের শেষ ঠিকানা ‘বয়স্ক পূনর্বাসন কেন্দ্র’। প্রতিষ্ঠানটিতে ভাগ্য বিড়ম্বিত নারী ও পুরুষের ঠাঁই হয়েছে। বর্তমানে এখানে ৮০ জন পুরুষ ও ৭০ জন নারী রয়েছেন। যাদের অনেকেরই সন্তান দেশের বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত। 

বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের অনেকেই সামাজিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছি। যে বাবা-মায়ের অপরিসীম ত্যাঘের ফলে সন্তান সমাজে প্রতিষ্ঠিত, সে সন্তান অনেক সময় তার বৃদ্ধ বাবা-মাকে অবজ্ঞা করছে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে। তেমনি অনেক অসহায় বাবা-মা শেষ জীবনে এখানে কাটাচ্ছেন। তাদের সবার জীবনের গল্পটা কষ্টের। নতুন প্রজন্মের কাছে প্রত্যাশা থাকবে কোনো বাবা-মায়ের স্থান যেন বৃদ্ধাশ্রম না হয়।

শিহাব খান/এসপি