নানা ধরনের ফুল, ফল ও সবজির গাছ রোপণ করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। ভবনের দুই ছাদে টবে করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ফুলের গাছ। প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে এটি একটি মিনি পার্ক। আর এমন প্রকৃতির শোভা বিচরণ করছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদে। পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আয়েন উদ্দিন একজন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। তিনি নিজেই এসব পরিচর্যা করেন।

জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে বদলগাছী উপজেলায় খুলসি বাজারে অবস্থিত ৮ নং বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদ। ২০১৬ সালের নির্বাচনে শেখ আয়েন উদ্দীন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি তার নিজ উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাপক পরিবর্তন করেন। পুরো ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর এবং ছাদ দুটিতে সবুজের সমারোহ গড়ে তুলেছেন তিনি।

ইউনিয়ন পরিষদের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন মিনি পার্ক। প্রকৃতিপ্রেমী এই চেয়ারম্যান তার নিজ অর্থায়নে পরিষদের চারপাশে ও ছাদের চারপাশে প্রায় ২০০ রকমের বিভিন্ন ফল, ফুল ও সবজি এবং ঔষধি গাছ রোপণ করেছেন। 

ফলের মধ্যে রয়েছে- মাল্টা, কমলা, আম, জাম, আমড়া, নারিকেল, কাঁঠাল, করমচা, পেয়ারা, কাঠ বাদাম, বরই, ড্রাগন এবং আঁখসহ অনেক মৌসুমি ফল। সবজি মধ্যে- লাউ, কুমড়া, পেঁপে, শিমসহ মৌসুমি সবজি। ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, পাতা বাহার, ঘাস ফুল, রজনীগন্ধা, বকুল, জবাফুলসহ ১৫ রকমের ফুল।

মুজিব শতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল নির্মাণ করেছেন প্রবেশ গেটে। মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে ম্যুরালটি নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যতিক্রম ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে জনসাধারণের মধ্যে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সাধারণ মানুষ ইউনিয়ন পরিষদে কাজের জন্য এলে আগে চুপ করে কোথাও বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতেন। আবার অনেক সময় চেয়ারম্যানের ব্যস্ততার কারণে বিরক্ত হয়ে চলে যেতেন। কিন্তু এখন পরিষদে এসে কাজ করতে দেরি হলেও কিছুটা সময় কাটান চত্বরের নির্মল পরিবেশে।

ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও প্রায় দুই বছর পর পরিষদে সেবা নেওয়ার জন্য আসছি। পরিষদের ভেতরে ঢুকে অবাক হলাম। এত সুন্দর করে পুরো ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ফুল, ফল ও নানা রকম ঔষধি গাছ রোপণ করা হয়েছে। আর গাছের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে বসার জন্য বেঞ্চ। মনে হলো কোনো পার্কে প্রবেশ করলাম। 

স্থানীয় বাসিন্দা শামসুর বলেন, চেয়ারম্যান পরিষদজুড়ে অনেক রকম ফল, ফুল এবং ঔষধি গাছ লাগিয়েছেন। এমনকি ছাদেও টবে করে সারা বছর ধরে এমন নানা ফলের গাছ লাগিয়েছেন। পরিষদের ভেতরে যেসব ফলের গাছে ফল ধরে সেবা নিতে আসা লোকজন সেসব ফল খেতে পারেন। সবমিলে একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে পরিষদ চত্বরজুড়ে। এখানে আসলে আর যেতে ইচ্ছে করে না। আহ কি সুন্দর সবুজে ঘেরা একটি পরিবেশ।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এমরানসহ তার কয়েকজন বন্ধু পরিষদ চত্বরে ঘুরে ঘুরে মোবাইলে ছবি তুলছিল। তারা জানায়, পরিষদের ভেতরে সুন্দর একটা পরিবেশ গড়ে তুলেছেন চেয়ারম্যান আঙ্কেল। পরিষদে ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে, একটি মিনি পার্ক। আমাদের বাড়ির পাশে কোনো পার্ক বা খেলার ভালো মাঠ নেই। তাই মাঝেমধ্যে বিকেল এখানে আসি।

ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ আবুল কালাম আজাদ বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব নিজে গাছগুলোর পরিচর্চা করেন। পরিষদের সেবাগ্রহীতারা বাগানে এসে সময় কাটান। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সবুজে ঘেরা পরিবেশ দেখে অনেকে ভেতরে ঢুকে ছবি তোলেন।

বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আয়েন উদ্দীন বলেন, আমি একজন আদর্শ কৃষক। আমি মানুষের ভালোবাসা নিতে এবং দিতে চাই। পেশাগত কাজ ও রাজনীতির পাশাপাশি গাছের প্রতি রয়েছে অন্যরকম ভালোবাসা। পরিষদের দুটি ছাদসহ পুরো চত্বরে প্রায় ২০০টিরও বেশি গাছ রয়েছে। সারা বছর ফল পাওয়া যায় এমন গাছও রয়েছে। গাছগুলোর পরিচর্যা আমি নিজেই করি। পাশাপাশি এক ইউপি সদস্য এগুলোে দেখাশোনা করেন। পরিষদের ভেতরে গাছ থেকে আসা ফল ও সবজি ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ এবং সেবা নিতে আসা লোকজন নিয়ে যায়।

এসপি