ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর দুটি চ্যানেলে আড়াআড়ি বাঁশের দুটি বেড়া, জাল ও ভেসাল দিয়ে অবৈধ উপায়ে মাছ ধরা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ভাই ও স্থানীয় এক বাসিন্দাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে গত ১৫ দিন ধরে সেখানে মাছ ধরা হচ্ছে।

জানা গেছে, পদ্মা নদীর চ্যানেলে আড়াআড়ি যে দুটি বেড়া দেওয়া হয়েছে তার একটি বেড়ার দৈর্ঘ্য ১৩০ মিটার এবং অপরটি ১২০ মিটার। এর ফলে ধরা পড়ছে বড় মাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ ও মাছের পোনাও। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন পেশাজীবী জেলেরা।

১৯৫০ সালের মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, নদীতে কিংবা কোনো জলাধারে এভাবে আড়াআড়িভাবে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

ওই আইনের তিন ধারায় বলা আছে,‘জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা নর্দমার উদ্দেশ্য ব্যাতীত নদী-নালা, খাল এবং বিলে অস্থায়ী বা স্থায়ী বাঁধ বা কোনোরূপ অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না।’ এ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হচ্ছে চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীর এই চ্যানেল দুটিতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরভদ্রাসন উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ছমীর ব্যাপারীর ডাঙ্গী ও আমীন খার ডাঙ্গী গ্রামের মধ্যে পদ্মার একটি চ্যানেল স্থানীয়ভাবে যা নমুরছাম কোল হিসেবে পরিচিত এবং একই ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের চর শালিপুর পূর্ব গ্রামে পদ্মা নদীর আরেকটি চ্যানেল যা এলাকাবাসীর কাছে গাছ বাগানের কোল নামে পরিচিত। পদ্মা নদীর ওই দুটি চ্যানেলে জাল ও বাঁশ দিয়ে আড়াআড়িভাবে ফাঁদ পেতে ভেসাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এই দুটি আড়াআড়ি বেড়ার মধ্যে দূরত্ব আনুমানিক তিন কিলোমিটার।

এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় প্রতি বছরই পানি কমলে এ দুটি স্থানে বেড়া দিয়ে মাছ ধরা হয়। ফলে স্থানীয়রা মাছ ধরতে পারেন না। তাদের মাছ ধরতে ওই বেড়ার ধারের কাছেও যেতে দেওয়া হয় না।

নমুরছাম এলাকায় আড়াআড়িভাবে ১৩০ মিটার দৈর্ঘের বেড়া দিয়েছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের হরিণা গ্রামের বিকাশ হালদার (৫৩) নামে এক ব্যক্তি।

মাঝারদিয়া ইউনিয়নের হরিণা গ্রামের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, বিকাশ হালদারের বাড়ি সালথায় হলেও তিনি মাছ ধরার জন্য চরভদ্রাসনে থাকেন। তার বাবা-মা সালথায় থাকেন।

বিকাশ হালদার জানান, গত ১৫ দিন আগে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি বাঁশ কিনে এই বেড়া দিয়েছেন। বিকাশ হালদার স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে নদীর চ্যানেল আটকে বাঁশের বেড়া দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

তিনি জানান, ছমির ব্যাপারীর ডাঙ্গীর বাসিন্দা চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য কবির খানের ভাই আজিজ খানকে ১০ হাজার এবং একই এলাকার বাসিন্দা আরেক প্রভাবশালী জাহাঙ্গীর খানকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি এভাবে মাছ ধরছেন।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা কবির খান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষ অনেক অভিযোগই করতে পারেন। কেউ পারলে সরাসরি অভিযোগ করুক। উড়ো কথায় কান দিচ্ছি না।

এদিকে হরিরামপুর ইউনিয়নের শালিপুর এলাকায় ১২০ মিটার দৈর্ঘের বেড়া দিয়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বাহাদুর গ্রামের হারান হালদার (৬৫) নামে আরেক মাছ ব্যবসায়ী।

হারান হাওলাদার বলেন, এটা অবৈধ তা জানি। কিন্তু পেটের দায়ে এই কাজ করেছি। প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কেউ আমাকে বাধা দেয়নি।

এ ব্যাপারে হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমীর হোসেন খান বলেন, সামনে নির্বাচন, এখন এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই এখন এসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি না। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ ব্যবস্থা নেবে। 

চরভদ্রাসন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মাহমুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর)  আমি নমুরছাম নামক স্থানে পদ্মা নদীর চ্যানেলে দেওয়া বেড়াটি পরিদর্শন করেছি। তবে দূরত্বের কারণে অপর বাঁধ গাছ বাগানের কোল নামক এলাকার বেড়াটি পরিদর্শন করতে পারিনি। দ্রুত ওই বাঁধে গিয়ে সরেজমিনে দেখে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব। 

চরভদ্রাসন উপজেলায় বর্তমানে ইউএনও নেই। এই উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন ফরিদপুর সদরের ইউএনও মো. মাসুদুল আলম।

তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, ওই বেড়া দুটি অপসারণ করার জন্য যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা করা হবে। 

আরএআর