লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভ্যাকসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা রেড ক্রিসেন্টর দুই সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। শনিবার (২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ভ্যাকসিন গ্রহণকারীরা এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় প্রায় ২ ঘণ্টা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

আহতরা হলেন রেড ক্রিসেন্টের জনসংযোগ বিভাগীয় উপপ্রধান সাইমা মহসিনা, যুব সদস্য সুদীপ্ত কর্মকার। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও রেড ক্রিসেন্ট সূত্র জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের জন্য প্রায় ১৫ হাজার জনকে বার্তা পাঠানো হয়।  সকাল ৯টা থেকে সদর হাসপাতাল, জেলা পরিষদ ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়।

সদর হাসপাতালে মহিলা ও জেলা পরিষদের পুরুষদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। সদর হাসপাতালে রেড ক্রিসেন্টর ৬ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন। ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ সময় দায়িত্বে থাকা রেড ক্রিসেন্টর সদস্য সাইমা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এতে কয়েকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মেঝেতে ফেলে লাথি মেরে আহত করে। তাকে উদ্ধারে সহযোগী সুদীপ্ত এগিয়ে গেলে তাকেও এলোপাথাড়ি ঘুষি মারে। এতে সুদীপ্তর মুখের ভেতরে ফেটে রক্ত বের হয়।

ভ্যাকসিনগ্রহণকারী একজন নারী ও তার সঙ্গে আসা পুরুষ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তাৎক্ষণিক তারা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। এরপর স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ বন্ধ করে চলে যান।

রেড ক্রিসেন্ট সদস্যদের অভিযোগ, ঘটনাটির পর সিভিল সার্জন আবদুল গফ্ফার ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তারা বৈঠক করেন। এ সময় তাদের নিরপত্তার বিষয়ে প্রশ্নে সিভিল সার্জন কোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি হননি।

তাদের ভাষ্যমতে, সিভিল সার্জনের বক্তব্য ছিল ‘স্বেচ্ছাসেবী হলে মাইর খেতে হয়। আমরাও খাচ্ছি, আপনারাও খান। এতে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিতে হবে। আমাদের করার কিছু নেই। আমি কোনো নিরাপত্তা দিতে পারব না।’

রেড ক্রিসেন্টর উপ-যুবপ্রধান নিজাম উদ্দিন মোহন বলেন, শুরু থেকেই আমরা ভ্যাকসিন ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে আসছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফ ও নার্সদের অনিয়মের কারণে একাধিকবার আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা মারধরের শিকার হয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো নিরাপত্তা দিচ্ছে না। এতে আমাদের মারধরের শিকার হতে হয়। অন্য জেলায় স্বেচ্ছাসেবীদের জনপ্রতি ২০০ টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা বিনামূল্যেই কাজ করে যাচ্ছি। অথচ সরকার আমাদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানান তিনি।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, খবর পেয়ে সদর হাসপাতাল ও জেলা পরিষদের টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানে এখন থেকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গফ্ফার বলেন, ঘটনাটি মীমাংসা করে দিয়েছি। ঘটনাটির কারণে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা না আসলেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএসআর