চুল নিয়ে যত গল্প-কাহিনী, উপন্যাস, কবিতা কিংবা রূপকথা— সব কিছুই নারীর চুল ঘিরে। আদি থেকে বর্তমান, নারীর সৌন্দর্য বিচার-বিশ্লেষণের বিবেচ্য বিষয় এই চুল। বাঙালি নারীর চুলের প্রশংসা এসেছে কাব্যে-গদ্যে। তার তাইতো সব নারীই চুলের প্রতি বিশেষ যত্নশীল থাকেন। তবে নিয়মিত যদি কারও চুল পড়তে থাকে তার যেন দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।

নিজের চুল পড়া নিয়ে বেশ সমস্যায় ভুগছিলেন ময়মনসিংহ নগরীর ইন্দিরাপাড়ার বাসিন্দা নাজনীন আরা মেঘলা। এরপর চুল পড়া বন্ধে গুগল ও ইউটিউবে শুরু হয় তার ঘাঁটাঘাঁটি। টানা তিন মাস চলে এ নিয়ে পড়াশুনা। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে নিজেই তৈরি করে ফেলেন চুলের তেল। মাসখানেক সেই তেল ব্যবহারে বন্ধ হয়ে যায় তার চুল পড়ার সমস্যা। বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিচিতজনরাও উদ্যোগী হয় সেই তেল ব্যবহারে, মেলে সুফলও।

এরপর মেঘলার মাথায় আসে এ নিয়ে শুরু করা যেতে পারে অনলাইন ব্যবসা। ‘অপরাজিতা— ম্যাজিক হেয়ারওয়েল’ নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে নাম লেখান অনলাইন ব্যবসায়। ধীরে ধীরে ঘটে প্রসার। আর এভাবেই নিজের তৈরি তেল বিক্রি করে এক বছরেই সফলতা পেয়েছেন নগরীর একটি প্রাইভেট কলেজের বিবিএর এ শিক্ষার্থী।

নাজনীর আরা মেঘলা বলেন, দুই বছর আগে যখন আমার প্রচুর চুল পড়তো, তখন বাজারের বিভিন্ন হেয়ার কেয়ার পণ্য এমনকি চিকিৎসকের দারস্থ হয়েও চুল পড়া কমছিল না। এরপর নিজের চেষ্টায় প্রাকৃতিক কিছু উপাদান দিয়ে মাত্র ২৫০ টাকা খরচ করে একটা হেয়ারওয়েল বানিয়ে এক মাস ব্যবহার করি। তাতে চুল পড়া একদম কমে গিয়েছিল, সেইসঙ্গে চুলের খুব ভালো পরিবর্তন আসতে শুরু করল। এটা থেকেই আমার মনে হলো, এখন অনেকেই চুল নিয়ে নানা সমস্যায় ভুগে, আমি এই তেলটা দিয়েই নিজে কিছু করে দেখতে পারি।

নাজনীন আরা মেঘলার ‘অপরাজিতা— ম্যাজিক হেয়ারওয়েল’ ফেসবুক পেজ

তিনি আরও বলেন, ‘ফেসবুকে চুলের ছবি দেওয়ার পর চট্টগামের এক পরিচিত আপু আমার চুলের ছবি দেখে জানতে চাইলেন আমি চুলে কী ব্যবহার করি। বিষয়টি খুলে বলার পর তিনি আমার কাছ থেকে তেলটি নিতে চাইলেন। পরে আমি ২৫০ টাকা খরচের সেই তেল ১০০ টাকা লাভে তাকে পাঠাই। ১৫ দিন ব্যবহারে এর সুফল পান তিনিও।

পরে ফেসবুকে তার পজিটিভ রিভিউ দেওয়ার পর একসঙ্গেই ১৫ জনের অর্ডার পাই। এভাবেই শুরু আমার এই হোম মেইড হেয়ার ওয়েলের অনলাইন ব্যবসা। করোনাকালে গত ১০ মাসে আয় হয়েছে ৬ লক্ষাধিক টাকা এবং বর্তমানে প্রতিমাসে ইনকাম ৮০ থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা।

মেঘলা জানালেন, গুণাগুণ বাড়াতে বর্তমানে তার তৈরিকৃত তেলে ২৫টি প্রাকৃতিক উপাদান ও ছয় রকমের তেল দিয়ে থাকেন। যা ব্যবহারে চুল পড়া-ফাটা বন্ধ করবে, খুশকি দূর, চুল নরম ও সিল্কি, চুল অকালে পেকে যাওয়া রোধ করবে, চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবে, চুল দ্রুত লম্বা করবে, মাথার চামড়ায় এলার্জি বা চুলকানি থাকলে তা দূর করবে, চুল প্রাণবন্ত রাখবে এবং নিয়মিত ব্যবহারে নতুন চুল গজাবে। তেলটির ১০০ মি.লি. বোতল ২০০ টাকা ও ২০০ মি.লি. বোতল বিক্রি করছেন তিনি ৩৫০ টাকায়।

তরুণ এ নারী উদ্যোক্তা মনে করেন, পরিশ্রমী নারীদের জন্য এই অনলাইন মাধ্যমে রয়েছে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ। ভালো পণ্য গ্রাহকদের দিতে পারলে যেমন বাড়ে সুনাম তেমনি প্রসারও ঘটে অনলাইন বিজনেসের।

এমএসআর