কুমিল্লার স্বপ্নবাজ তরুণ মাসুম বিল্লাহ ভূঁইয়ার হাত ধরে গড়ে উঠা ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান জায়ান্ট মার্কেটার্স। সততা, নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রমে জায়ান্ট মার্কেটার্স এখন বিশ্বের ৫২টিরও বেশি দেশে বিশ্বমানের ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলায় তিন হাজার স্কয়ার ফুটের অত্যাধুনিক অফিসে ৩৫ জন এবং ভার্চুয়ালি ১৫ জনের সহযোগিতায় চলছে এসইও, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, অনলাইন মার্কেটিং এবং কনসালটেন্সি, ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রোমোশন এবং ব্যান্ডিংয়ের কাজ। একাডেমিক শিক্ষায় ভালো না হলেও যাদের ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে বেসিক ধারণা রয়েছে তারাও এখানে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।

সরেজমিনে জায়ান্ট মার্কেটার্সের অফিসে দেখা যায়, তৃতীয় ও চতুর্থতলায় মনোরম পরিবেশে কাজ করছেন ৩৫ জন তরুণ-তরুণী। এ সময় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় জায়ান্ট মার্কেটার্সের প্রতিষ্ঠাতা মাসুম বিল্লাহর।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের দিকে অনলাইন সেক্টর নিয়ে কাজ শুরু করি। সেই থেকে এই সেক্টর নিয়ে ঢাকায় পড়াশুনার পাশাপাশি ইন্টারনেট থেকে আয় করতে শিখতে থাকি। তারপর থেকে এই সেক্টরে আগ্রহ বাড়তে থাকে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্লগার এবং ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করলেও ২০১৫ সালের অক্টোবরে ঢাকা থেকে জন্মস্থানের টানে কুমিল্লায় চলে আসি। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা এত সহজ ছিল না। যেখানে সবাই ঢাকামুখী সেখানে মফস্বল শহরে বসে কোনো উদ্যোগ নেওয়া সব সময় চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল। তার থেকে বড় সমস্যা ছিল দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও দক্ষ লোকবলের। তবে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে কুমিল্লার মেধাবী ও উদ্যমী কিছু তরুণ-তরুণী নিয়ে জায়ান্ট মার্কেটার্সের পথ চলা শুরু হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে লোকাল এসইও সার্ভিস দেওয়ার পাশাপাশি আমেরিকান একটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করি।  তখন দুজন অফিসিয়াল এবং একজন ভার্চুয়ালি জায়ান্ট মার্কেটার্সের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত ছোট পরিসরে ব্যবসা পরিচালনা করি। ২০১৯ সালে ছয়জন অফিস সহযোগী নিয়ে কুমিল্লার ঝাউতলায় ১৮০০ স্কয়ার ফুট অফিসে বৃহত্তর পরিসরে কাজ শুরু করি।

জায়ান্ট মার্কেটার্স কো-ফাউন্ডার মো. নাজমুল হাসান বলেন, কাজ এবং ব্যবসা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে জায়ান্ট মার্কেটার্সে নতুন নতুন  কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে বাড়তে থাকে কর্মী সংখ্যা। ২০২১ সালের প্রথম দিকে জায়ান্ট মার্কেটার্সের একই ভবনের পঞ্চম তলায় আরও ১২০০ স্কয়ার ফুটের আরেকটা নতুন কমার্সিয়াল স্পেস নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, আড়াই বছরের মধ্যে জায়ান্ট মার্কেটার্স আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ইতালি, জার্মানি, ইউক্রেন, ভারতসহ ৫২টিরও বেশি দেশে এসইও, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, অনলাইন মার্কেটিং এবং কনসালটেন্সি, বিজনেস প্রোমোশন এবং ব্যান্ডিং সার্ভিস দিচ্ছে। নতুন নতুন আরও অনেক দেশে আমাদের সার্ভিসের মার্কেটিং এবং প্রমোশন সম্প্রসারণ করছি। আশা করছি, খুব দ্রুত আমাদের সার্ভিস বিশ্বের শতাধিক দেশে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো।

এই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার হাবিবুর রহমান। শুরুতে অনলাইন সেক্টর নিয়ে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। অনেক চেষ্টার পর সফলতার মুখ দেখতে পারেননি তিনি। তখন জায়ান্ট মার্কেটার্সের মাধ্যমে প্রফেশনাল কাজ শুরু করি। বর্তমানে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি।

সিনিয়র এসইও এক্সিকিউটিভ মম সায়মা বলেন, কুমিল্লা বসে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকে। তবে জায়ান্ট মার্কেটার্সে মেয়েদের জন্য কাজ করার সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। কাজের পাশাপাশি চিত্তবিনোদন থেকে শুরু করে সকল ব্যবস্থা এখানে রয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডার মাসুম বিল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, সকলের সহযোগিতা পেলে আগামীতে জায়ান্ট মার্কেটার্সের নিজস্ব কমার্সিয়াল ডিজিটাল ক্যাম্পাস করার ইচ্ছা আছে। এর মাধ্যমে কুমিল্লাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার তরুণ-তরুণীদের বেকার সমস্যা সমাধান করা হবে। পাশাপাশি কুমিল্লাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে দেশের জন্য রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব হবে।

এসপি