পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, স্যোশাল মিডিয়া যখন প্রথম এসেছে তখন পশ্চিমবিশ্বের মিডিয়ার মাতব্বররা বলেছিলেন, স্যোশাল মিডিয়া নাগরিকের অধিকারের দরজা খুলে দেবে। সেই স্যোশাল মিডিয়াতেই দেখা সাংবাদিকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভূমিহীনরা কবরস্থান ও মসজিদ পেয়েছে। এটিই স্যোশাল মিডিয়ার শক্তি। করোনাকালীন এর মাধ্যমে বহু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি আমরা। ভালো কাজে স্যোশাল মিডিয়ার শক্তির আমরা প্রশংসা করি। প্রত্যাশা করি স্যোশাল মিডিয়া বেশি বেশি করে সিটিজেন রিপোর্টিংয়ের দ্বার উন্মোচন করবে।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরে-রামগতি সড়কের দুই পাশে বসবাসকারী নদীভাঙা ভূমিহীন প্রায় ২ হাজার মানুষের জন্য কবরস্থান ও মসজিদের ফলক উন্মোচন ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

এসময় মসজিদ ও কবরস্থানের জমির দলিল ভূমিহীনদের সংগঠক আবদুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে তিনি কবরস্থান ও মসজিদ পরিদর্শন করেন।

পুলিশ প্রধান বলেন, বাংলাদেশে অবশ্য গুজব ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি রোধ করতে হবে। সিটিজেন রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের সমস্যাগুলো সামনে নিয়ে আসবেন। এতে সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা সেসব সমস্যা সমাধান করবেন।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নত হচ্ছে। কিন্তু মানুষের মৃত্যুর পর দাফনের স্থান নেই এটি মেনে নেওয়া যায় না। মানুষের মৃত্যুর পর দাফন করা অবিচ্ছেদ্য মানবাধিকার। এটি তার ধর্মীয় অধিকার। এটি পরিবারে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর নৈতিক কর্তব্য। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিহীনদের জন্য কবরস্থান ও মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার (এসপি) ড. এএইচএম কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মির্জা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

জেলা পুলিশ জানিয়েছে, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর আইজিপির উদ্যোগে পুলিশ সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের আবদুর কুদ্দুসের কাছ থেকে কবরের জন্য জমি কিনেন। ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম চরমনসা গ্রামের জমিটি গেল বছরের ১ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রি হয়। এরপর থেকে জমির চারপাশে সীমানা প্রাচীর তুলে কবরস্থান ও মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সেখানে গভীর নলকূপ, মরদেহ ধোঁয়ারঘর ও বাথরুম রয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে কবরে যাওয়ার জন্য রাস্তাও সংস্কার করা হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৪ শতাধিক মানুষকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। মানবিক কারণে আইজিপির উদ্যোগে জেলা পুলিশ কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে গত ২০ বছরে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার প্রায় অর্ধেক তলিয়ে গেছে। নদীতে ভিটে-মাটি হারানো অন্তত দুই হাজার পরিবারের ১০ হাজার অসহায় মানুষ রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের দুইপাশে বসবাস করে। ভবানীগঞ্জ থেকে তোরাবগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের দু’পাশে কোনোমতে অস্থায়ী ঘর তুলে তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনছেন। এসব পরিবারের কেউ মারা গেলে কবর দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান ছিল না। বাধ্য হয়েই যেখানে-সেখানে লাশ দাফন করছেন। অনেক সময় মরদেহ নিয়ে ৬-৭ ঘণ্টা বসে থাকতেও হয়েছে। এবার পুলিশের দেওয়া জমিতে তারা মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করতে পারবেন।  

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস