‘সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন‘ —জীবনানন্দ দাশের কবিতার এ চরণটুকু বলে দেয় জীবনের সঙ্গে পাখি আর প্রাণপ্রকৃতি কতটা নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। যেখানে পাখি আছে, সেখানে প্রকৃতিতে একটা প্রাণ আছে। পাখি ও প্রকৃতির এক অপরূপ মেলবন্ধন এখন  কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার শিমুলতলা গ্রামে। দেশি-বিদেশি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে কটিয়াদির এ গ্রামটি।

ভোরবেলা পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙে এখানকার মানুষের। প্রতিদিন আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ এসব পাখি দেখতে আসে। এ জন্য গ্রামটি ‘পাখির গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।

জীববৈচিত্র্য বিনাশের এ যুগে শিমুলতলা গ্রামে দেখা মেলে হারিয়ে যাওয়া ও বিরল প্রজাতির অনেক পরিযায়ী পাখির। প্রকৃতিপ্রেমীরা বৈচিত্র্যময় এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন প্রতিদিন। পরিবেশবাদীদের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ জনপদে এমন অভয়াশ্রম নজিরবিহীন ও আশাজাগানিয়া।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার সহস্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়নের সিঙ্গুয়া নদীর পাড়ে ঘনবসতিপূর্ণ ছায়াসুনিবিড় গ্রাম শিমুলতলা। এ গ্রামে পাখিদের এমন অভয়াশ্রম দীর্ঘদিনের। গ্রামের গাছে গাছে দেখা যায় বিরল প্রজাতির বক, বালিহাঁস, পানকৌড়িসহ লাখো পাখি। এদের কোলাহল চারদিকে দারুণ এক দ্যোতনা সৃষ্টি করে। সেখানে উপস্থিত হলেই কেবল বোঝা যায়, এ কেমন সুন্দর ও নান্দনিক এক অপরূপ দৃশ্য। 

স্থানীয়রা জানান, সকালবেলা এসব পাখি খাবারের সন্ধানে যখন একসঙ্গে আকাশে ওড়ে, তখন সূর্য যেন আড়াল হয়ে যায়। পাখিদের কলরবে মুখর হয়ে ওঠে এ এলাকার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। আবার সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার সময় কোলাহলপূর্ণ দৃশ্য উপভোগ করতে ভিড় জমান পাখিপ্রেমীরা।

স্থানীয় যুবক শাহীন আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, যখন পাখিগুলো থাকে না, খুব খারাপ লাগে, মনে হয় আর তারা ফিরে আসবে না। আবার যখন ফিরে আসে, তখন মন আনন্দে ভরে যায়। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী পাখিগুলো দেখতে আসেন। তাই এ গ্রামটি এখন পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিত। 

শিমুলতলা গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, অন্যান্য স্থানে শীতে এলেও এখানে গরমের শুরুতে পাখিগুলো আসে আর শীতের শুরুতে চলে যায়। এটা খুবই ব্যতিক্রম। যখন পাখিগুলো থাকে, তখন পুরো গ্রাম মুখর করে রাখে। আবার যখন থাকে না, গ্রামটা খালি খালি লাগে। এসব পাখি দেশের সম্পদ, এদের রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। তাই আমরা সবাই পাখিগুলোকে দেখে রাখি, যাতে কেউ পাখি শিকার করতে না পারে।

পাখি দেখতে আসা জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, অনেক প্রজাতির পাখি এখানে আছে। এত বেশি পাখি অন্য কোথাও দেখিনি। একসঙ্গে এত পাখি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি।

শাহেদ আলী নামে এক দর্শনার্থী জানান, শিমুলতলা গ্রামটি ‘পাখির গ্রাম’ শুনে ছুটে এসেছি পাখি দেখার জন্য। শুনেছিলাম হাজার হাজার পাখি। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে লাখ লাখ পাখির বসবাস এখানে।

কিশোরগঞ্জের পরিবেশবাদী সংগঠক ছাদরুল উলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই পাখিগুলোকে সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে এ গ্রামটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠবে। এখানে নানা জাতের দেশি-বিদেশি পাখির বসবাস। এরা যাতে বিলুপ্ত না হয় এবং এদের কোনো রোগবালাই যেন না হয়, সে জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে তদারকি করার দাবি জানাচ্ছি।

এনএ/জেএস