দাম্পত্যজীবনে নানা রকম মনোমালিন্য আর পারিবারিক কলহের পর অবশেষে পুলিশ সুপারের উদ্যোগে একসঙ্গে সংসার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের মনিরামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও রজনী খাতুন। 

বুধবার (৬ অক্টোবর) চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম ‘উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে তাদের মধ্যকার কলহ নিরসন করে দেন। এ সময় তারা ভুল শুধরে পুনরায় সুখে সংসার করার প্রতিশ্রুতি দেন।

রজনীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের মনিরামপুর গ্রামের আসলাম মণ্ডলের মেয়ে রজনী খাতুনের (২১) সঙ্গে আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী ইয়নিয়নের মুনতাজ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলামের (২৪) বিয়ে হয়। তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান। সন্তানকে নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল তাদের সংসার।

বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে যৌতুকের দাবিতে রফিকুল তার স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। রজনী খাতুন যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রফিকুল স্ত্রী রজনীকে তালাক দেন।

কিছুদিন পর সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে রফিকুল-রজনী পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিছুদিন না যেতেই আবারও শুরু হয় অশান্তি। রফিকুল রজনীকে বিভিন্ন কারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। রজনী বিভিন্ন জায়গায় সমাধান চেয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। শেষে পরিত্রাণ পেতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কাছে যান তিনি। পরে পুলিশ সুপার এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেন।

উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিতা রানী জানান, তিনি উভয় পক্ষের সমস্যার কথা শোনেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উভয়কে অনুরোধ করেন। অবশেষে রফিকুল ভুল স্বীকার করে রজনীর সঙ্গে সংসার করতে রাজি হন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল না করার প্রতিশ্রুতি দেন।

মিতা রানী বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অবস্থিত ‘উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার’ ইতোপূর্বে অসংখ্য পরিবারকে ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে। রকিকুল-রজনী দম্পতি উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান করা হয়েছে। উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের পদক্ষেপ দেখে ভুক্তভোগীরা আসছেন প্রতিদিন। এ পর্যন্ত কেউ সমাধান ছাড়া ফিরে যাননি।

চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার (এসপি) জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সময় ছোটখাটো সমস্যার কারণে অনেকের সংসার ভেঙে যায়। এতে অনেক শিশু মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে শিশুর সঠিক বিকাশ হয় না। এসব কারণে জেলা পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার। এর মাধ্যমে রফিকুল-রজনী দম্পতি ফিরে পেল তার সুখের সংসার ও তার শিশুকন্যাটি ফিরে পেল পিতৃস্নেহ।

আফজালুল হক/এনএ