‘ছয় মাস আগেও আমি সুস্থ স্বাভাবিক ছিলাম। হঠাৎ নাক, মুখ, ঠোঁট, চোখ, হাতের রেখা, নাভি, পায়ের পাতাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। যখন রক্ত বের হয় তখন খুব জ্বালা-যন্ত্রণা হয়। খুলনা ও ঢাকার বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে গিয়েছি, কিন্তু কেউ সুস্থ করতে পারেননি। আমার খুব কষ্ট হয়। কথা বলছি এখনও ঠোঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।’  

এভাবেই ঢাকা পোস্টের কাছে নিজের কষ্টের কথাগুলো বলছিল অসুস্থ ফারজানা আক্তার বৃষ্টি (১৫)। সে খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের বাবুরাবাদ গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে। বৃষ্টি স্থানীয় কালিকাপুর চৌধুরী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

ফারজানা আক্তার বৃষ্টি বলে, সুস্থ হওয়ার জন্য আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। কোনো উপায় জানা থাকলে সেই ব্যবস্থা করুন। আমি স্কুলে যেতে চাই। এখন আর স্কুলেও যেতে পারি না। সব সময় বাড়িতেই থাকি। একটু নড়াচড়া করলেই শরীর দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। খেলাধুলাও করতে পারি না।

বৃষ্টির বাবা শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছয় মাস আগে হঠাৎ একদিন কাচে হাত লেগে মেয়েটার হাতের আঙুল কেটে যায়। এরপর স্থানীয় প্যারামেডিকেল চিকিৎসক নিমাইকে দেখালে তিনি রক্ত বের হওয়া বন্ধ করতে পারেননি। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক উৎপল কুমার ও ফয়সাল আহম্মেদকে দেখালে তারাও রক্ত বের হওয়া বন্ধ করতে পারেননি। তখন ঢাকা থেকেও রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। বৃষ্টিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমোটলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজকে দেখানো হয়। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. উকিল চন্দ্র রায়কে দেখানোর পরামর্শ দেন। 

এরপর উভয় চিকিৎসক বলেন, ‘ধারণা করছি বৃষ্টি হেমাটিড্রোসিস সিনড্রোম নামক বিরল রোগে আক্রান্ত। এমন রোগ লাখে একজনেরও মেলে না। তবে আপনার মেয়ের হয়েছে। চেষ্টা করে দেখেন সুস্থ হয় কিনা।’ তারপর তারা তিন মাসের ওষুধ দেন। সেই তিনমাস পার হলেও মেয়ের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখন ভাবছি, চিকিৎসার জন্য মেয়েটাকে ভারতে নিয়ে যাব।

কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় কুমার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারটি খুব অসহায়। মেয়েটির বাবা মাছের পোনার ব্যবসা করে। খুলনা-ঢাকায় চিকিৎসা করিয়েছে কিন্তু কোনো সুফল মেলেনি। মেয়েটির শরীর দিয়ে রক্ত বের হয়। ভারতে নিয়ে যাবে এমন পরিকল্পনা করেছে। পাসপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে, ভিসা হাতে পেলেই বৃষ্টিকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাবে তার পরিবার। 

কয়রার কালিকাপুর চৌধুরী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফারজানা আক্তার বৃষ্টি আমার স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। মেয়েটা খুব মেধাবী। শরীরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রক্ত ঝরছে মেয়েটার। যখন রক্ত বের হয় তখন বের হওয়া রক্ত জমাট না বাঁধা পর্যন্ত রক্ত বের হতে থাকে। বের হতে থাকা রক্ত মুছলে তখন আরও রক্ত বের হয়।  মেয়েটাকে কীভাবে সুস্থ করা যায় সে ব্যাপারে আমরাও চেষ্টা করছি। তবে কোনো উপায় পাচ্ছি না। 

তিনি জানান,  পরিবারটিও খুব অভাবি। বৃষ্টিরা চার বোন। বৃষ্টি সবার বড়। বাকি তিন বোন সুস্থ স্বাভাবিক রয়েছে।

আকরামুল ইসলাম/আরএআর