সিলেটে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ভুলের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন দুজন। এ ভুলের কারণে তাদের ছবি, স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ ছাড়া বাকি সবই বদল হয়ে গেছে। এতে করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ শিক্ষা ও চাকরি নিয়ে নানা ধরনের জটিলতায় পড়েছেন তারা। 

তিন বছর আগে দুইজনই সংশোধনের জন্য আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত সেই বিষয়ে কোনো সুরাহা পাননি। পরিপ্রেক্ষিতে দুইজনই এখন নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন।

২০১৫ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকারিয়া আহমেদ। তবে ভুলবশত তার ব্যক্তিগত তথ্য অন্য আরেকজনের সঙ্গে বদল হয়ে যায়। জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে আসার পর তিনি লক্ষ্য করেন জাতীয় পরিচয়পত্রে তার ছবি ও স্বাক্ষর ছাড়া, নিজের নাম, বাবার নাম এবং জন্মতারিখ আরেকজনের।

জাকারিয়া আহমেদ বলেন, বিষয়টি দেখার পর আমি তিন বছর আগেই সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা থেকে পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করি। এর কয়েকদিন পরেই আমার সঙ্গে যার তথ্য বদল হয়েছে তিনিও আবেদন করেন। তবে ছয়মাস পর কোনো কারণে অন্যজনের আবেদনটি বাতিল হয়ে গেলে তিনি আবারও আবেদন করেন। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং দুইজনের সংশোধন আবেদন দুটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে পড়ার কারণে সংশোধনের পথ আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

জাকারিয়া আক্ষেপ করে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র জটিলতার কারণে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করতে পারিনি। এমনকি যে কোনো বেসরকারি চাকরি কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ থেকেও আমি বঞ্চিত হচ্ছি। এছাড়া আমরা দুইজন অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালের একই দিনে তিনি ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ছবি ও আঙুলের ছাপ দিতে যান। ভুলে তারও জাতীয় পরিচয়পত্রে শুধু ছবি ছাড়া বাকি সব জাকারিয়া আহমেদ’র তথ্য চলে এসেছে।

তিনি বলেন, ২০১৬ অথবা ২০১৭ সালের দিকে জাতীয় পরিচয়পত্র আমি হাতেপাই। সেটা বাড়িতে নিয়ে এসে দেখার পর আমি হতবাক হয়ে যাই। আমার ছবি ছাড়া আর কোনো তথ্যই সেখানে আমার ছিল না। পরে ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলে কোনো সমাধান হয়নি। উপজেলায় গিয়ে দেখা করেও সমাধান হয়নি। প্রতিমাসেই দুই থেকে তিনবার যাই। সংশোধন হলে তারা আমাকে মুঠোফোনে জানাবে বলে জানিয়ে দেন।

তিনি আরও বলেন, আমি বিদেশ যেতে ইচ্ছুক। তবে আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুলের কারণে সেটি রিইস্যু করাতে পারছি না। অনলাইনে আবেদন করেছি দীর্ঘদিন। এখনও আমার আবেদনটি পেন্ডিং দেখায়। উপজেলার নির্বাচন অফিসের পরামর্শে ঢাকায় গিয়ে কোনো সমাধান পাইনি।

এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, ভুলবশত এ রকম হয়ে থাকতে পারে। তবে যারাই আমাদের  কাছে আসে আমরা সংশোধন করে দেই। আমাদেরও কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তাদের বিষয়টি আমি খতিয়ে  দেখছি। আশা করছি দ্রুত এটি সমাধান হয়ে যাবে।

তুহিন আহমদ/এমএএস