পাবনার কাজিরহাট-আরিচা রুটে ফেরি সমস্যার সমাধান হচ্ছেই না। দুটি পুরাতন ছোট ফেরি দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এতে দুই পাড়ে আটকা পড়েছে প্রায় চার শতাধিক যানবাহন।

রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুর থেকে বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল নামে ফেরি দুটি এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শাহ জালাল, শাহ মাখদুম, কপোতি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছিল। শনিবার সন্ধ্যায় শাহ মাখদুম ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।

এর আগে বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে রো রো ফেরি বেগম রোকেয়া ও ডাম্প ফেরি কপোতি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১০ দিনের মতো বন্ধ ছিল। পরে মেরামত করে ঘাট সচল করা হয়। ছোট দুটি ও বড় দুটি চারটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার  করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এখান থেকে বড় দুটি ফেরি নিয়ে যাওয়া হয়েছে শিমুলিয়া ঘাটে। 

উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের দুর্ভোগ লাগবে এই নৌপথে ফেরি চালু করা হয়। কিন্তু বর্তমান অবস্থার জন্য ঘাটের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন যাত্রী, চালক ও শ্রমিকরা। এক দিন পর পরই ফেরিতে ত্রুটি দেখা দেয়। সেটি মেরামত করতে দীর্ঘ সময় লাগে। যানজট সৃষ্টির এটি একটি বড় কারণ বলে দাবি করছেন চালক-যাত্রীরা। 

তাদের মতে, কর্তৃপক্ষ দুটি ফেরি দিয়ে ঘাট সচল রাখার দাবি করলেও কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে কাজিরহাট-আরিচা নৌপথ। ঘাটে পণ্যবাহী গাড়ির চাপ দেখেও নতুন বড় ফেরি এখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে কাজিরহাট ফেরিঘাটে দেখা গেছে, ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন যানবাহনের চালকরা। দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ট্রাক টার্মিনাল, আবাসিক হোটেল, পাবলিক টয়লেট, যাত্রী ছাউনি ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় ট্রাকচালকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তার জন্য একটি নৌফাঁড়ি স্থাপন করার দাবি জানান পরিবহন চালক ও ব্যবসায়ীরা।

কাজিরহাট ঘাটে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ থেকে আসা মো. আসাদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, দুদিন ধরে ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছি। সিরিয়াল পাওয়া তো দূরের কথা। আরও দুদিন ঘাটে অবস্থান করা লাগতে পারে। একটি ফেরিতে ৪-৫টি করে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এত ছোট ফেরি দিয়ে বড় একটি রুটের যানবাহন পারাপার করা সম্ভব নয়।

কুষ্টিয়া থেকে আসা নাঈম হোসেন বলেন, ঘাটে পাঁচদিন ধরে আটকা আছি। ঘাট কর্তৃপক্ষ অপচনশীলপণ্য পরিবহনগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। যাত্রী পারাপার নিয়ে ব্যস্ত তারা। একটি ফেরিতে মাত্র চার-পাঁচটি পণ্যবাহী ট্রাক তোলায় এমন ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে। 

নঁওগা থেকে এসেছেন আশরাফ আলী নামে এক চালক। তিনি বলেন, দিনের পর দিন এখানে অবস্থান করলেও ঠিকমতো ফেরির দেখা পাইনি। এখানে আবাসিক হোটেল, বাথরুম, টার্মিনাল নেই। নিরাপত্তার জন্য একটি লাইটও লাগানো নেই। সব সময় চুরি-ডাকাতির ভয় থাকে। ডাকাতির ভয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।

কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকল দুটি ফেরি মেরামত করে চারটি ফেরি দিয়ে ঘাটের যানজট কমানো হয়েছিল। পণ্যবাহী ট্রাকের তেমন চাপ ছিল না। স্বাভাবিক গতিতে পারাপর হচ্ছিল। বেগম রোকেয়া ও বেগম সুফিয়া কামাল নিয়ে যাওয়াতে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখানে এই দুটি ফেরি চালু রাখা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ নাকি আমাদের জন্য আরও একটি ফেরি বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। সেটি এখনও ঘাটে পৌঁছায়নি। আরিচা ঘাটে সেটি অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। রোববার সকাল পর্যন্ত দুই পাড়ে চার শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। 

রাকিব হাসনাত/এসপি