বজ্রপাতে আয়ের একমাত্র অনুষঙ্গ দুটি গাভি হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের আমুরদিয়া গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক হাবিবুর রহমান (৬৫)। গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। 

এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ঢাকা পোস্টে। সেই প্রতিবেদন দেখে তিনজন দানশীল ব্যক্তির ৬০ হাজার টাকায় রোববার একটি গাভি কিনে দেয়া হয়েছে হাবিবুর রহমানকে। 

তিনি বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের আমুরদি গ্রামের বাসিন্দা মৃত ওমেদ শেখের ছেলে। পৈত্রিক সূত্রে মাত্র ৪ শতাংশ জমি পেয়েছেন হাবিবুর। ওই জমিতে একটি ছাপড়া ঘরে বসবাস করেন তিনি। ঘরটির ভিত মাটির। চারপাশ ও ওপরে টিন দিয়ে ঘেরা। আর রয়েছে একটি গোয়াল ঘর। এ ঘরের ওপরে টিন ও চারপাশে পাটখড়ির বেড়া দিয়ে তৈরি।

হাবিবুর দম্পতির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ে রুনা বেগমের (২৯) বিয়ে হয়েছে বোয়ালমারির ময়েনদিয়া গ্রামে। দ্বিতীয় মেয়ে জেসমিন বেগমের (২৭) বিয়ে হয়েছে ফরিদপুর সদরের কানাইপুরে। ছোট মেয়ে নাসরিন আক্তার (১২) সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। 

বড় ছেলে মিলন শেখের বয়স ১৬ বছর। সে বগুড়ায় একটি মিলে কাজ করে। নিজের খরচ রেখে বাড়িতে সামান্য টাকা পাঠায় সে। কিন্তু সেটা দিয়ে সংসার চলে না। ১০ বছর বয়সী ছোট ছেলে সাব্বির শেখ বাড়িতে বাবার কাজে সাহায্য করে। বাড়ির ৪ সদস্যের সংসার চলতো হাবিবুরের পালন করা গাভির দুধ বিক্রির টাকায়। কিন্তু বজ্রপাতে গরু দুটি হারিয়ে পথে বসে পড়েন তিনি।

এ নিয়ে ঢাকা পোস্টে 'বজ্রপাতে গরুর মৃত্যু, দুধ বিক্রির টাকায় চলত বৃদ্ধের সংসার' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে সেটি ফেসবুকে শেয়ার করে পরিবারটির জন্য একটি গরু কেনার জন্য টাকা সাহায্য কামনা করেন ঢাকা পোস্টের হেড অফ কান্ট্রি মাহাবুর আলম সোহাগ। সেই পোস্টে সাড়া দিয়ে কয়েকজন দানশীল ব্যক্তি ৬০ হাজার টাকা দেন গরু কেনার জন্য। 

ওই টাকায় আজ রোববার (১০ অক্টোবর) দুপুরে বোয়ালমারী সদর বাজারের গরুর হাট থেকে হাবিবুরের পছন্দ মতো একটি অস্ট্রেলিয়ান জাতের গাভি কিনে দেওয়া হয়। এসময় তার বড় ছেলে মিলন, জামাই মিলন হোসেন (৩১) ও প্রতিবেশী চাঁন মিয়া (৪৫) উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, গরু কেনার টাকা নিয়ে ফরিদপুর থেকে বোয়ালমারী যান প্রথম আলোর ফরিদপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক প্রবীর কান্তি বালা, ডেইলি স্টারের সুজিত কুমার দাস, বাংলাদেশ প্রতিদিনের চরভদ্রাসন উপজেলা প্রতিনিধি আবদুস সবুর কাজল এবং ঢাকা পোস্টের ফরিদপুর প্রতিনিধি জহির হোসেন।

গাভি পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, আমার গরু দুইটা বজ্রপাতে মারা গেছে, সাতদিন হইলো। অনেকেই বাড়ি আইছে, ছবি তুলে নিছে, সান্ত্বনা দিছে। কেউ দুইটা পয়সাও দেয় নাই। আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই আবার এত বড় একটা গরু আমার গোয়ালে যাবে। যারা আমাকে গরুটি দিলেন তাদের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আবার আমি বাজারে দুধ বিক্রি করতে পারব। আমার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরবে।

হাবিবুরের বড় ছেলে মিলন জানায়, আমাদের সংসার দুধ বিক্রির টাকায় চলত। বজ্রপাতে গাভি দুটি হারিয়ে পথে বসে গিয়েছিলাম আমরা। গাভির চিন্তায় আমার মা-বাবা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। আজ গাভিটি পেয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে আমার মা।

ছোট ছেলে সাব্বির শেখ জানায়, আমি আবার গরুর জন্য ঘাস কাটতে পারব। আবার দুধ নিয়ে বাজারে যেতে পারব। গরু দুটি মরে যাওয়ার পর আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। নতুন গরু দেখে আবার আমার খুশি লাগছে।

প্রতিবেশী চাঁন মিয়া বলেন, নতুন এ গাভিটি আগামী দুই-এক মাসের ভেতর গাভিন (গর্ববতী) হবে। হাবিবুরের বজ্রপাতে গরু মারা যাওয়ার কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।

বোয়ালমারীর দাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ষাট হাজার টাকায় গরু কেনার সামর্থ্য তার ছিল না। তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার তার। বজ্রপাতে তাকে পথে বসিয়ে দিয়েছিল। নতুন গরু পেয়ে সে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

জহির হোসেন/এমএএস