প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোনো বরাদ্দ না আসায় দুর্দশায় দিনাতিপাত করছেন বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসীরা। শীতের দিনে ভাঙাচোরা দেয়াল, টিনের ছাউনির ফোকর গলিয়ে প্রচণ্ড শীত, বর্ষায় ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি আর গ্রীষ্মে অস্বাভাবিক গরমে পুড়তে হচ্ছে তাদের।

সমাজসেবা অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, সংস্কারের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর আগেও কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারের জন্য বরাদ্দ আসেনি। জেলা প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে, এ বর্ষার আগেই ভবনগুলো সংস্কার হবে। নিবাসীদের দাবি, মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হোক এ পুনর্বাসন কেন্দ্রের।

সমাজসেবা অধিদফতর বরিশাল জানিয়েছে, যৌনকর্মীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষে ২০০২-২০০৩ অর্থ বছরে দেশের ৬টি বিভাগীয় শহরে ৬টি সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তারই আওতায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার জাগুয়ায় ১ একর ৫০ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণ করা হয় পুনর্বাসন কেন্দ্রটি।

এ কেন্দ্রে বর্তমানে ৩৫ জন সামাজিক প্রতিবন্ধী তরুণী রয়েছেন। তাদেরই একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিগত দুই বছর ধরে শীতের দিনে এই কেন্দ্রে বসবাসকারী নিবাসীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি ধারাবাহিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি দুই বছর। কারণ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে এখানে। দরজা, জানালা বন্ধ করে দিয়েও ঠাণ্ডা ঠেকানো যায় না। পুনর্বাসন কেন্দ্রের টিনের ছাউনি ভেঙে গেছে। এজন্য বর্ষা এলেই বেডরুম, ডাইনিং রুমে পানি পড়ে।

তিনি আরও বলেন, আপতত বহুতল ভবন না হলেও অন্তত একতলা একটি ভবন করে দিলে এখানে আর ভোগান্তির শিকার হতে হয় না। 

একই শর্তে আরেক নিবাসী বলেন, কেন্দ্রের মেঝে দেবে গেছে। চলাচল করতে সমস্যা হয়। বেডরুম, ডাইনিং রুম সবখানে যেমন মেঝে দেবে গেছে তেমনি মাথার ওপরের ছাউনিতেও ছিদ্র। তিনি দাবি করেন, একটু ভালোভাবে ভবনটি তুলে দিলে তাদের অবহেলিত জীবনে আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্য আসত।

বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ২৮৮ জন নিবাসী ভর্তি হন। যাদের মধ্যে ২৩৯ জন পুনর্বাসিত হয়েছেন। স্বাবলম্বী হতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৫১১ জন। এ কেন্দ্র থেকে অনেক নিবাসীর বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত সমাজসেবা অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে তা সম্পন্ন হয় এবং বিয়ের পরও তাদের খোঁজখবর রাখা হয়।

সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, পুনর্বাসন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর কোনো নতুন ভবন হয়নি। ফলে দীর্ঘ ১৮ বছরে অনেকস্থান থেকেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। টিনশেড ভবন। বর্ষায় পানি পড়ে। এখানে একটি বহুতল ভবনের প্রয়োজন। এখানকার নিবাসী এবং আমাদের এই আকাঙ্খা বহুদিনের। এ বছর আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে এ বছরই আমরা যেন প্রাক্কলন পাঠাতে পারি সেই চেষ্টা করব।

বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে জানতে পারলাম। এর আগে সরকারকে সমাজসেবা থেকে জানানো হয়েছে। আমরা পুনরায় উন্নয়নের জন্য জানাব। এ বিষয়ে খুব দ্রুতই আমরা ব্যবস্থা নেব। আশা করছি আগামী বর্ষার আগেই ভবনটি সংস্কার করা হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস