নাম তার কাশেম বয়াতি। বয়স ৮৫ বছর। প্রায় ৬৫ বছর ধরে লালমনিরহাটের বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে ওষুধ বিক্রি করেন। কখনও কারও কাছে হাত পাতেন না। হাটবাজারে গান গেয়ে যে টাকা পান তা দিয়েই চলছে তার সংসার।

কাশেম বয়াতি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা চাপারতল এলাকার বাসিন্দা। এক নামে তাকে সবাই চেনে। দোতারা হাতে গান গেয়ে মাজন, দাদ, চুলকানি, ইঁদুর, তেলাপোকা মারার ওষুধ এবং হাঁস-মুরগির ওষুধ বিক্রি করেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কাশেম বয়াতির প্রচুর নাম-ডাক ছিল। তাকে দেশ-বিদেশে নিয়ে যেত বিভিন্ন দলের লোকজন। তার নাচ-গানে মুগ্ধ হতো দর্শকরা। দর্শকের মন মাতিয়ে কয়েকবার পুরস্কারও পেয়েছেন। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে এখন আর কেউ কাসেম বয়াতির গান শুনতে চায় না। তবে এখনও এক শ্রেণির শ্রোতা রয়েছে তার গানের। এই শ্রোতারা গান শুনে আবার কেউ টাকা দেয় না। তাই বিকল্প হিসেবে হাট-বাজারে ওষুধ বিক্রি শুরু করেন।

কাশেম বয়াতি বলেন, যুদ্ধের পর দেশের অনেক জায়গায় ভাওয়াই, মারফতি, পালাগান গেয়েছি। কিন্তু বয়সের কারণে এখন আর আগের মতো গলায় স্বর আসে না। তার মধ্যে এখন সবার হাতে মোবাইল ফোন। 

তিনি বলেন, ঝড়-রোদ-বৃষ্টি-শীত উপেক্ষা করে সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে গান করি। পাশাপাশি মাজন, দাদ, চুলকানি, ইঁদুর, তেলাপোকা মারার ওষুধ ও হাঁস-মুরগির ওষুধ বিক্রি করি। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে যায়। এই পেশা এখন আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। বাকি জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ যদি একটি দোকান করে দিত তাহলে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারতাম। 

কাশেম বয়াতির দুই ছেলের একজন ভ্যানচালক, অপরজন একটি কোম্পানির সেলসম্যান। সংসারে অভাব থাকায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। হাটবাজার ঘুরে যা বিক্রি করেন তা দিয়ে সংসার চলছে।

ওই এলাকার রবি, শামছুল ইসলাম, মিজান মিয়া জানান, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, তিনি গান ছাড়া কিছুই বোঝেন না। সকালে বেরিয়ে পড়েন আর বাড়িতে ফেরেন গভীর রাতে।

কাকিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হক বলেন, সমাজসেবা অধিদফতর থেকে তাকে একটি ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। শেষ বয়সে এসে যদি তার কোনো ইচ্ছা থাকে তবে পরিষদে আবেদন করলে অব্যশই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসপি