হোটেলে মানুষ খাবার খাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন কোনো অবুঝ প্রাণি এমনটা করে তখন বিষয়টি একটু আশ্চর্য লাগতেই পারে। এমনই কিছু গরুর দেখা মিলেছে রংপুর নগরে। গৃহপালিত হলেও এসব গরু অনেকটাই ভবঘুরে স্বভাবের।

সকাল-বিকেলে নাস্তা করে হোটেলে। আর বাকি সময় কাটায় রাস্তাঘাটে ময়লা-আর্বজনার ভাগাড়ে নয়তো মাঠে ঘুরে। সেখানেই নিজের পছন্দের খাবার খেয়ে ক্ষুধা মেটায়। শুধু বাড়ি থেকে বের হয়ে এবং ফেরার আগে মালিককে জানান দেয়। প্রভুভক্ত এ গরুগুলো রংপুর নগরের দক্ষিণ কেল্লাবন্দ এলাকার আশেক আলীর।

রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে নগরের মেডিকেল মোড় জেল রোডে পুরাতন চাকঘরের কাছে একটি হোটেলের সামনে দেখা মেলে এমন একটা গরুর। হোটেল থেকে একজন বেরিয়ে এসে গরুটিকে রুটি, পরোটা খাওয়াতে ব্যস্ত। খানিক বাদে গরুর সঙ্গে যেন বোঝাপড়া সারলেন ওই ব্যক্তি। বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলতেই গরুটি সোজা বাড়ির পথে হাঁটা ধরল। ঠিক তখনই আগ্রহ জাগে গরু ও হোটেলওয়ালার সম্পর্ক জানার।

কথা বলে জানা গেল হোটেলে এসে নাস্তা খাবার এ দৃশ্য নতুন নয়। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ওই হোটেলে খাবার খায় গরুটি। এমন আরও দুটি গরু ও বেশ কিছু ভেড়া রয়েছে হোটেল মালিকের। গৃহপালিত এ প্রাণিগুলো বেশ প্রভুভক্ত। মালিকের ভাষা, ইশারা সবই বোঝে। কৌতুহল মেটাতে কথা হয় হোটেল মালিকসহ কয়েকজনের সঙ্গে।  

হোটেল পরিচালনায় ব্যস্ত রাসেল হোসেন হাসু ঢাকা পোস্টকে জানান, তারা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গরু ও ভেড়া পালন করে আসছেন। তাদের পালিত গরু-ভেড়া অনেক বেওয়ারিশ প্রাণির মতো ঘুরে বেড়ায়। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে হোটেলের সামনে এসে নাস্তা খায়। এরপর মেডিকেল কলেজের মাঠে নয়তো কখনো সড়কের পাশে থাকা ডাস্টবিনের ঘেরে দিন কাটে দলছুট গরুর। বিকেলে আবার সেই হোটেলের সামনে একটু খাবার খেয়ে ফিরে যায় বাড়ি। 

তিনি আরও বলেন, গরুকে গৃহপালিত প্রাণি বলা হলেও আমাদের গরু সারাদিন রাস্তাঘাটে থাকে। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিকেলে ফিরে যায়। যদি কখনও দেখি হোটেলের সামনে গরু আসেনি, তখন একটু খোঁজ নিয়ে থাকি। তবে বেশির ভাগ দিনই সকালে হোটেলে এসে নাস্তা জাতীয় রুটি, পরোটা, পুরি খেয়েই চলে যায়। আবার বিকেলে বাড়ি ফেরার আগে হোটেলের কাছে এসে খাবার খায়। হোটেল ছাড়া রাস্তাঘাট আর মাঠে খাবার খেয়ে গরুগুলো বড় হচ্ছে। এসব গরু পালনে আমাদের বাড়তি কোনো খরচ বা ঝামেলা নেই।  

গরুগুলো প্রভুভক্ত হওয়াতে ডাক পেলেই ছুটে আসে বলেও হাসু জানান। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমাদের গরুগুলো খুব শান্ত। আদর বোঝে। ডাকলে কাছে চলে আসে। রাস্তা থেকে বাড়ি ফিরে যেতে বললে তাই করে। খুব ভালো লাগে যখন গরুগুলো কথা শোনে। এটা আসলে ভালোবাসার টান। কিছু কিছু পশুপাখি এমন করে, যেন মানুষের চেয়েও বেশি ভালোবাসা তাদের মধ্যে।

হাসুর বড় ভাই লিটন মিয়া বলেন, ১০-১২ বছর ধরে এভাবেই আমরা গরু লালন-পালন করে আসছি। প্রতিদিন সকালে গরু বের হয়ে আবার বিকেলে বাড়ি ফিরে যায়। আমাদের তিনটা গরু হারিয়েছে। তবুও এটা যেন একটা রুটিন হয়ে গেছে। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত দিনের বেশির ভাগ সময় গরুগুলো রাস্তাঘাটে থাকে।

হোটেলে চা বানাতে ব্যস্ত ষাটোর্ধ্ব সোলেমান সরকার। তিনি বলেন, অবুঝ প্রাণি হলেও গরুগুলো যেন সবই বুঝে। কখনো হোটেলের কোনো ক্ষতি করেনি। বরং সুন্দরভাবে সকালে এবং বিকেলে হোটেলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থেকে মালিককে দেখা দেয়। পেটে ক্ষুধা থাকলে খাবার খেয়ে চলে যায়।

হোটেলের পাশের একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত কাজে এসে গরুর এমন কাণ্ড দেখে অবাক হন সরকার নাজমুল নামে এক যুবক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন তো মানুষ মানুষের কথা শোনে না। অথচ এখানে গরুর প্রভুভক্তি দেখে আমি আশ্চর্য হলাম। ডাকার সঙ্গে সঙ্গে এসে খাবার খেয়ে আবার মালিকের কথা মতো ফিরেও গেল। সত্যি ভালো লাগার মতো বিষয়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি