টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভার বাসাইল-সখীপুর সড়ক থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে একটি প্রভাবশালী মহল। ইজারা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক্টর থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকার রশিদ প্রদান করে চাঁদা তোলা হয়। যদিও পরিবহনচালকরা বলছেন, পৌরসভার কোনো সড়ক ব্যবহার করে না পরিবহনগুলো।

চালকরা অভিযোগ করেন, চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে জোর করে স্টিয়ারিং থেকে চাবি ছিনিয়ে নেওয়াসহ শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়। তাই বাধ্য হয়েই তাদের টাকা দিতে হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে তারা জানান।

ট্রাকচালক ইদ্রিস আলী বলেন, কয়েক বছর আগেও বাসাইল-সখীপুর সড়কে চলাচল করলে কোনো চাঁদা দিতে হয়নি। কিন্তু এখন এ সড়কে চলাচল করতে ৩০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে গাড়ি চাবি ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া অনেক চালককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। আমরা এই চাঁদা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

পিকআপচালক এরশাদ বলেন, বাসাইলে এলেই আগে থেকে ৩০ টাকা আলাদা করে রাখতে হয়। টাকা দিতে দেরি হলে চাঁদাবাজরা গালিগালাজ করে। এসব চাঁদা তোলা বন্ধ হলে আমাদের জন্য উপকার হয়।

বিষয়টি জানতে সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকজন যুবক বাসাইল-সখীপুর সড়কে চলাচলকারী পরিবহন থেকে চাঁদা তুলছেন। কোনো পরিবহনের চালক যদি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন, তাহলে চাবি নিয়ে নিচ্ছেন তারা। সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে তারা পরিবহন থেকে চাঁদা তুলছেন।

তবে এ বিষয়ে স্থানীয় সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল থেকে বাসাইল-সখীপুর সড়কটি এলজিইডির আওতাধীন। আর এই সড়কে চলাচলকারী ও বাসাইল বাসস্ট্যান্ড ও বাজারে লোড-আনলোডকৃত পরিবহনগুলো থেকে রশিদের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়। এতে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক্টর থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ইজারাদার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মোমিন নাহিদ তার নিয়োগকৃত লোকজনের মাধ্যমে টাকা তুলছেন।

এতে পরিবহনের প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন থেকে চাঁদা তোলায় সড়কে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে চলাচলকারীরা। তাই সড়কে এই চাঁদা আদায়কে অবৈধ ও তা বন্ধের দাবি করেন চালকরা।

স্থানীয়রা জানান, আব্দুল মোমিন নাহিদ প্রভাবশালী হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত এ সড়ক থেকে চাঁদা আদায় করছে। এতে মাঝেমধ্যেই বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশের সড়কে যানজেট লেগে থাকে। এতে সড়কে চলাচলকারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে ইজারাদার ও পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোমিন নাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৌরসভার ভেতর পরিবহনের লোড-আনলোডের জন্য প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। গত জুন মাসে ইজারা দেয় পৌরসভা। এতে শুধু যেসব পরিবহন বাসস্ট্যান্ডসহ বাজারে লোড-আনলোড করে, সেসব পরিবহন থেকে টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন থেকে টাকা আদায় করা হয় না।

বাসাইল উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আব্দুল জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসাইল-সখীপুর সড়কটির অধিকাংশ পড়েছে সখীপুরের মধ্যে, কিছু অংশ বাসাইলের মধ্যে। তবে এটি এলজিইডির অধীনে। ওই সড়ক থেকে টোল আদায় করার কোনো নিয়ম আছে কি না, সেটা জানা নেই।

বাসাইল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু যেসব পরিবহন লোড-আনলোড করবে, সেসব পরিবহন থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। সড়কে চলাচলকারী কোনো পরিবহন থেকে টোল আদায় করতে পারবে না ইজারাদার। পৌরসভার ফাঁকা জায়গায় স্টেশন ইজারা দেওয়া হয়েছে, কোনো সড়ক ইজারা নয়। যদি ইজারাদার সড়কে চলাচল করা কোনো পরিবহন থেকে টোল আদায় করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিজিৎ ঘোষ/এনএ