সবে সন্ধ্যা গড়িয়েছে। মণ্ডপে চলছে দেবী দুর্গার আরতি। মন্ত্র জপছেন পুরোহিত। চারদিকে ধূপের ধোঁয়া। শঙ্ক ধ্বনির সঙ্গে বাড়ি পড়ছে ঢাকে। আসলে ঢাকের পাগলা বিট ছাড়া শারদ উৎসব জমে না কখনোই।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর কুমারপাড়া এলাকার প্রতিশ্রুতি মণ্ডপে কিশোর সঙ্গীকে নিয়ে ঢাক বাজাচ্ছিলেন ঢাকি উত্তম কুমার। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হেলে-দুলে ঢাক বাজাচ্ছিল ৪ বছর বয়সী শিশু রূপঙ্কর বিশ্বাস।

রূপঙ্কর নগরীর কুমারপাড়া এলাকার শুভ বিশ্বাসের ছেলে। আধো আধো বোল মুখে। কিন্তু ঢাকের বোল দিব্যি তুলছে সে পাকাপোক্ত। বিষয়টি নজর কেড়েছে মণ্ডপে দেবী দর্শনে আসা লোকজনের। অনেকেই ক্যামেরাবন্দিও করেছেন রূপঙ্করের ঢাকের বাদ্য।

শিশু রূপঙ্করের এমন কীর্তিতে অবাক ঢাকি উত্তম কুমার। রাজশাহীর চারঘাটের বাসিন্দা উত্তম কুমার ঢাক বাজান ৩০ বছর ধরে। তার বাবা এমনকি দাদাও ঢাকি ছিলেন।

উত্তম কুমার জানান, রূপঙ্করের ঢাক বাজানো শেখা তাকে দেখেই। তিনিই তার জন্য ঢাক বানিয়ে এনে দিয়েছেন। অনেক সময় নিজেকে উত্তম ঢাকি বলেও পরিচয় দেয় রূপঙ্কর। বিষয়টি তার ভালো লাগে।

প্রতিমা দর্শনে স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে মণ্ডপে এসেছিলেন ববিতা লাহিড়ী। তিনি জানান, মাত্র চার বছরের শিশু দিব্যি ঢাক বাচাচ্ছে। বিষয়টি সত্যিই খুশির। আমরা সবাই তাকে নিয়ে খুবই গর্বিত। আর্শিবাদ করি, ভবিষ্যতে সে বড় কিছু হউক।

মণ্ডপে ছিলেন রূপঙ্করের দাদি চিত্রা বিশ্বাস। তিনি বলেন, বাজনার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। সেটি দেখে তার পিষি ঢাক কিনে দিয়েছেন। দুই বছর বয়স থেকে সে ঢাক বাজায়। এখন সে ভালোই ঢাক বাজাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তার সারাক্ষণের সঙ্গী ঢাক। আরতির সময় মণ্ডপে ঢাকি এসে ঢাক বাজান। ওই সময়ও তাদের সঙ্গী হয় রূপঙ্কর। আরতি শেষে ঢাকি চলে যাবার পর, এমনকি সারাদিন থেমে থেকে ঢাক বাজায় রূপঙ্কর।

দাদি যোগ করেন, তার বাবাও শৈশব থেকে বাদ্যযন্ত্রর প্রতি আগ্রহী ছিল। শিল্পকলা একাডেমি থেকে তবলায় তালিমও নিয়েছেন। এখন তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত যন্ত্রশিল্পী। তিনি মনে করেন, নাতির এই গুণ ঈশ্বর প্রদত্ত।

যখন কথা হয়, দাদির কোলেই ছিল রূপঙ্কর। সে জানায়, ঢাক তার সঙ্গী। যেভাবে বলবে, সেভাবেই সে ঢাক বাজাবে। বড় হয়ে দূরের প্যান্ডেলে ঢাক বাজাতে যেতে চায় রূপঙ্কর।

রূপঙ্করের মা জয়শ্রী বিশ্বাস জানান, তাকে কখনো ঢাক বাজানো শেখানো হয়নি। আপনা-আপনি শিখে গেছে। সে বাড়িতেও সবসময় ঢাক বাজায়। সে ঢাক না বাজালে, আমরা বিষয়টি মিস করি। সৃষ্টিকর্তা একটা ভালো গুণ তার মধ্যে দিয়েছেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর