নোয়াখালীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধিকাংশ সড়কের এখন বেহাল অবস্থা। জেলার ৯ উপজেলার সঙ্গে মহাসড়কে সংযুক্ত সব সড়কই ভেঙে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব ভাঙা-চোরা সড়কে পানি জমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এলজিইডি’র আওতাভুক্ত গ্রামীণ পাকা ও আধাপাকা সড়কের অধিকাংশই রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়ছে।

প্রতি অর্থবছর এক থেকে দেড়শ কিলোমিটার করে সংস্কার করা হলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়ক। এতে মোটা অংকের টাকা অপচয় হচ্ছে সরকারের। কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিবৃষ্টি ও অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে সড়ক নষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নোয়াখালী সদর ও সুবর্ণচরের সংযোগ সড়কটির ৯০ শতাংশই খানাখন্দে ভরে গেছে। বেশির ভাগ অংশে তৈরি হয়েছে বড় গর্ত। এতে সড়কে যানবাহনগুলো প্রায় বিকল হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকি না থাকায় অল্প সময়ে সড়কের বেহাল হয়ে পড়ছে।

জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) হিসাবমতে, জেলায় ১২ বছরে নতুন সড়ক উন্নয়ন হয়েছে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার। সব মিলিয়ে বর্তমানে এলজিইডির পাকা সড়ক প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। এসব সড়কের ৪৫ শতাংশেরও বেশি ব্যবহারের অনুপযোগী।

স্থানীয়রা জানায়, এ বছর সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলোতে আস্ত ইট ফেলেছে এলজিইডি। ফলে সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই ভাগে সংস্কার করা হয়েছিল নোয়াখালী সদর ও সুবর্ণচরের সংযোগ সড়কটি।

সোনাপুর থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে সুবর্ণচর উপজেলার পাশাপাশি হাতিয়ায় যাওয়ারও অন্যতম সড়ক এটি। ১৯ কিলোমিটারের সড়কটি সংস্কারে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে এ সড়কের  দুর্ভোগ লাগবে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, সড়কটির দায়িত্ব বর্তমানে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই অর্থবছর দুই ভাগে সংস্কার হয়েছিল জেলা সদরের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটের অন্যতম সংযোগ সড়কটি। ২০ কিলোমিটারের সড়কটি সংস্কারে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ওই সড়কটিরও একই দশা।

আদর্শস্কুল মোড় এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংস্কারের এক বছরের মথায় সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। এখনো সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করেছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যাচ্ছেতাই কাজ করে গেছে।

অটোরিকশাচালক শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে অন্তত চারবার তার রিকশাটি বিকল হয়েছে। একই অবস্থা সবার। কার দুঃখ কাকে বলবে। রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হই দুই টা টাকা পাওয়ার জন্য কিন্তু গাড়ি নষ্ট হলে সব টাকা শেষ।’

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নুর ইসলাম হৃদয় বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণে সড়ক-মহাসড়কগুলোর এই দশার সৃষ্টি হয়েছে। এসব রাস্তা প্রস্তুতকালে কতিপয় ঠিকাদারদের সীমাহীন অসততার জন্যই এই দুর্ভোগ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ইকরামুল হক বলেন, বর্ষায় সড়কে পানি জমাট বাঁধা এবং সড়কের পাশের গাছের কারণে অল্পদিনেই সড়ক নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচলও সড়ক নষ্ট হওয়ার বড় কারণ। পর্যায়ক্রমে জেলার সব সড়ক সংস্কার করা হবে।

হাসিব আল আমিন/এমএসআর