পাবনায় ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন শিশু ও বৃদ্ধসহ অর্ধশতাধিক মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে শিশু-ডায়রিয়া ওয়ার্ডেই ২৩৫ জন ভর্তি রয়েছেন। সিট না পেয়ে বারান্দা-করিডোরে অবস্থান করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।

সরেজমিনে বুধবার (১৩ অক্টোবর) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা জেনারেল হাসপাতালেই প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়াসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শয্যা না থাকায় অধিকাংশ রোগীর জায়গা হয়েছে বারান্দা বা করিডোরে।

ধারণক্ষমতার বেশি রোগী আসায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের। রোগীরা এক সপ্তাহ ধরে হাসাপাতালে ভর্তি হলেও তাদের জন্য বেড বরাদ্ধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি বিভাগেও রোগীর বাড়তি চাপ দেখা গেছে। শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ছোট্ট তিনটি রুমে শতশত মানুষ গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর শীতের মৌসুম শুরুর আগেই জেলায় অল্পসংখ্যক শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে শীত না থাকলেও অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে ৩৬টি সিট থাকলেও এখানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৯০ জন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৬ বেডের বিপরীতে ৪৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

এসব রোগী প্রায়ই হাসপাতালের বারান্দায় বা করিডোরে অবস্থান করছেন। গত এক সপ্তাহ যাবত রোগীর চাপ আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জরুরি বিভাগেও প্রতিদিন অন্তত শতাধিক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন নিউমোনিয়াসহ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গড়ে ৫০-৬০ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে প্রায়ই শিশু-বৃদ্ধরা। বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ১৯০ ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৬ জন রোগী ভর্তি আছেন।

তিনি আরও জানান, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৫০টি। এর মধ্যে কোভিড রোগীদের জন্য ১০০ শয্যা সংরক্ষিত করে রাখার পর বাকি রয়েছে ১৫০টি। কিন্তু এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০। শিশু ওয়ার্ডের ১৫ জন নার্স ও পাঁছজন চিকিৎসক আড়াইশ রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

গত ১২ দিনে শিশু ওয়ার্ডে ৬৬০ জন রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ১১০ জন, ডায়রিয়া ১০ জন। বাকি সবাই জ্বর, থ্যালাসেমিয়া, খিচুনিসহ নানা রোগে আক্রান্ত। গত সেপ্টেম্বর মাসে এই ওয়ার্ডে মোট রোগী ভর্তি হয় ১৪৬৮ জন। এর মধ্যে ৮১০ জন নিউমোনিয়া আক্রান্ত ছিল। এদের মধ্যে শিশু ৫১০ জন বয়স্ক ২৯৮ জন। বাকি সবাই জ্বর থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত।

ঈশ্বরদীর বাশেরবাদা এলাকা থেকে আগত মরিয়ম আক্তার বলেন, হঠাৎ করেই কয়েকদিন থেকে আমার ছেলেটি অপুষ্টিজনিত কারণে ভুগছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে ৪ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করার পর জানা গেল শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। তবে শিশুর অবস্থা বর্তমানে কিছুটা ভালো।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফরিদপুরের জারিফের অভিভাবক ফাতেমা বেগম বলেন, ৬ দিন আগে শিশুর ঠান্ডা-জ্বর দেখা দেয়। গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জ্বর কমেনি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডায়রিয়াও দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা করে নিউমোনিয়া শনাক্ত হয়েছে।

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ শামসুন্নাহার ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ রহিমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতের মৌসুম না আসতেই  হঠাৎ করেই শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসক সংকটের জন্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. কে এম আবু জাফর বলেন, রোগীর চাপে কোনো ওয়ার্ডেই নির্ধারিত শয্যা অনুযায়ী রোগী ভর্তি বা চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি এ সীমিত ব্যবস্থার মধ্যে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে।

এদিকে জেলা সদর ছাড়াও জেলার অন্য আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু, বয়স্কসহ নানা বয়সী মানুষ ভর্তি হচ্ছেন। আটটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক সপ্তাহে অন্তত তিন শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতজনিত রোগ বাড়লেও চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আতঙ্কিত হওয়ার মতো এখনো কিছু হয়নি। রোগীর সংখ্যা যদিও বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

রাকিব হাসনাত/এমএসআর