অভাব অনটনের সংসার। সামান্য আয় আর দুঃখ-কষ্টে কাটছিল একেকটা দিন। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় মা-বাবা খুঁজে পেত সুখ। কিন্তু সেই সুখও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নয় মাস বয়সী শিশু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে জানা যায় নাবিল জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত। 

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রাজিব গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম শিশু শাফিউল বারী নাবিলের। এখন তার বয়স তের বছর ছুঁই ছুঁই। স্থানীয় মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সে। তার বাবা আলী হোসেন পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। 

পঁচিশ বছর ধরে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে পরিবারকে আগলে রাখতে চেষ্টা করছেন আলী হোসেন। অভাব অনটনের সংসারে দুই ছেলে সন্তানকে ঘিরেই তার স্বপ্ন। ছেলেদের পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি। কিন্তু ছোট ছেলে নাবিলের রোগে-শোকে পুরো পরিবার এখন দিশেহারা।

যে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সুখ খুঁজতেন মমতাময়ী মা নাছিমা বেগম। আজ তিনিও বাকরুদ্ধ সন্তানের বাঁচতে চাওয়ার আকুতি মিনতি শুনে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা নাবিলের মুখ দিনদিন ফ্যাকাসে হয়ে আসছে। বাড়ছে তার হৃদযন্ত্রে ধরা পড়া ছিদ্রের যন্ত্রণাও। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এখন তার অস্ত্রোপচার জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা। 

বাবা আলী হোসেন কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে জানান, নয় মাস বয়সে শিশু নাবিলের হাঁপিয়ে যাওয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। তখন থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলছিল। হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি হলে নাবিলকে ২০১৮ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে হৃদযন্ত্রে ছিদ্র ধরা পড়ে।

সমাজের বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগিতায় নাবিলকে ২০১৯ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক দেবী প্রসাদ শেঠির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হয় নাবিলের। দুই বছরের জন্য ওষুধ সেবনের পরামর্শের সঙ্গে হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার করার আভাস দেন সেখানকার চিকিৎসকরা। 

সম্প্রতি নাবিল আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দিন দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ভারতের নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে তার পরিবারের লোকজন।

নাবিলের মা নাছিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেঙ্গালুরুর ওই হাসপাতাল থেকে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিয়ে ভারতে যেতে বলেছেন। কিন্তু নাবিলের কাঠমিস্ত্রি বাবা অন্যের দোকানে কাজ করে যা মজুরি পান, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। সন্তানের চিকিৎসা করা তো অসম্ভব। নাবিলের অস্ত্রোপচারের টাকা সংগ্রহ করতে আমাদেরকে বিত্তবানদের কাছে হাত পাততে হবে। না হলে সন্তানকে বাঁচাতে পারব না।

আলী হোসেন বলেন, ভাবছি ছেলেকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাব। কিন্তু এরই মধ্যে দেশে ও ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধার–দেনাসহ সম্ভাব্য সব টাকার উৎস শেষ হয়ে গেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে গেলে প্রায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এখন কীভাবে কী করব? আমার ছেলেটা বাঁচতে চায়। ছেলেকে বাঁচাতে সবার কাছে ভিক্ষা চাইছি। সবাই এগিয়ে এলে আমার নাবিল আবার হাসবে, খেলবে।

নাবিলের বড় ভাই নাবিউল বারী নোমান। সে স্থানীয় টেপামধুপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট ভাইয়ের এমন রোগে মন ভেঙেছে তার। সব সময় ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে নোমান। 

ছোট ভাইকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা চেয়ে নাবিউল বারী নোমান বলেন, আমার একটা মাত্র ভাই। আব্বা আম্মা আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। আমরা পড়াশোনা করে বড় হব। আমাদের অভাব থাকবে না। কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন বোধহয় শেষ হতে যাচ্ছে। ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য শুরুতে অনেক ধার–দেনা করা হয়েছে। গ্রামের মানুষগুলোও আর্থিক সহায়তা করেছে। এখন আবার আমার ভাই অসুস্থ। তাকে অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করাতে হবে। অনেক টাকা লাগবে। আমার ভাইকে বাঁচাতে সবার সহযোগিতা দরকার। 

একই উপজেলার স্থানীয় উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিটুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মুহূর্তে শিশুটির চিকিৎসা জরুরি। ভারত থেকে তাকে অস্ত্রোপচার করতে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় কাঠমিস্ত্রি বাবার জন্য এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব হবে না। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসলে নাবিলকে সুচিকিৎসার মাধ্যমে বাঁচানো যাবে। আমরা গ্রামের মানুষ চেষ্টা করছি, তবে বিত্তবানদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলা যাবে নাবিলের বাবা আলী হোসেনে ০১৭৭৩৮৬০৩১৩ নম্বরে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস