দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থান ঘুরে দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। পর্যটকদের ভ্যানে করে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখিয়ে সংসার চালাচ্ছেন রাশেদ হোসেন ও আব্দুল বাসেদ নামে দুই সহোদর ভ্যানচালক।

তারা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার উত্তম জায়গা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক তেঁতুলগাছ, তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার, ইকো পার্ক, সমতল ভূমির চা-বাগান ও কমলা বাগানে নিয়ে যান পর্যটকদের। এভাবে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলছে দুই ভাইয়ের সংসার। এ আয়ের ওপর চলে সন্তানদের পড়াশোনা।

শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে জেলার তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় তাদের ভ্যানে বসে বিভিন্ন পর্যটকদের ডাকতে দেখা যায়।

জানা গেছে, রাশেদ ও বাসেদ উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের নামাগছ এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত হোসেন আলীর ছেলে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে তারা অটোচার্জার ভ্যান নিয়ে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোয় হাজির হন এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকদের ভ্যানে উঠিয়ে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখান এবং পরিচয় করিয়ে দেন।

সারা দিন এভাবে পর্যটকদের ঘুরিয়ে-বেড়িয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে তাদের পরিবার। তবে বর্ষাকালে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকায় তিন মাস তাদের অন্য কাজ করতে হয়। পাশাপাশি ভ্যানে যাত্রী পরিবহন করে চলতে হয়।

কথা হয় দুই ভাইয়ের সঙ্গে। তারা ঢাকা পোস্টকে জানান, যাত্রী হিসেবে সাধারণ মানুষদের তাদের ভ্যানে ওঠালে ভাড়া কম দেয় আর পর্যটকদের ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ালে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বকশিশ দেওয়ায় তাদের আয় বেশি হয়। তাই তারা বেশি আয়ের জন্য ভ্যানে পর্যকদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানোর কাজ বেছে নিয়েছেন।

ভ্যানচালক রাশেদ হোসেন জানান, তার পরিবারে স্ত্রী ও এক ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। পর্যটক ঘুরিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার। তবে কয়েক দিন ধরে পর্যটকদের আগমন কম থাকলেও দু-এক দিন ধরে পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার পর্যকদের নিয়ে ভ্যান চালাতে ভালো লাগে বলেই এই কাজটা করি। ঘুরে ঘুরে তাদের সব দেখাই। সকাল হলে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরি। সারা দিন যা আয় করি, তা দিয়ে আমার সংসার চালাই। তবে স্থানীয় যাত্রীদের চেয়ে পর্যটকদের ভ্যানে যাত্রী হিসাবে ওঠালে ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়।

আব্দুল বাসেদ বলেন, আমরা দুই ভাই প্রতিদিন ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে পিকনিক কর্নারে ভ্যান নিয়ে এসে পর্যকদের অপেক্ষায় থাকি। প্রতিদিন পর্যটকরা তেঁতুলিয়ায় আগমন করলেও অক্টোবর-নভেম্বর দুই মাসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ায় সেই সময়ে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। আমরা দুই ভাই পর্যটকদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে  দেখাই এবং এলাকাগুলোর বিষয়ে গল্প শোনাই।

এদিকে ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়ায় ঘুরতে আসা অনিক হাসান নামে এক পর্যটক বলেন, আমি আজ তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য সকালে গাড়ি থেকে নামামাত্রই ওই দুই ভ্যান চালকদের হাঁকডাক শুনতে পাই। দুই ভ্যানচালক তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে নিয়ে বেড়ালেন এবং বিভিন্ন তথ্য জানালেন। আর ভ্যানে করে ঘুরে দেখতে ভালোই লাগে।

পর্যটক লিপি আক্তার বলেন, পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়ায় ঘুরতে আসছি কিন্তু কোনো ধারণা ছিল না। রাসেদের ভ্যানে উঠলে তারা আমাদের সব দর্শনীয় স্থান ঘুড়ে নিয়ে বেড়ান। অনেক ভালো লেগেছে।

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন জাগ্রত তেঁতুলিয়ার সংগঠক ফেরদৌস আলম লিটন বলেন, রাশেদ ও বাসেদ নামে ওই দুই ভ্যানচালক মূলত বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের এমন উদ্যােগ প্রশংসনীয়। যারা তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন স্থান বিষয়ে জানে না বা দেখেনি, তারা রাশেদ ও বাসেদের ভ্যানে উঠে সব স্থান ঘুরে দেখতে পারেন।

তেঁতুলিয়া ট্রাভেল এন্ড টুরিজমের পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, রাসেদ ও বাসেদ তারা দুই ভাই আমাদের তেঁতুলিয়ার পর্যটন উন্নয়নে অনেক অবদান রাখছেন। কোনো পর্যটক এলে তাদের দুজনের কাছে যায় এবং তাদের ভ্যানে উঠে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখান। 

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, রাশেদ ও বাসেদ প্রতিদিন পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে পরিচিত করাচ্ছেন। তারা যেন তাদের এমন উদ্যােগ ধরে রাখতে পারে, সে জন্য আমরা সহযোগিতা করব। 

এনএ